মনিকা গোমেজ:
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম গীর্জা “আওয়ার লেডি অব দ্যা হলি রোজারিও ক্যাথিড্রাল চার্চ” চট্টগ্রাম পাথরঘাটা বান্ডেল রোডে অবস্থিত।
১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগীজদের দ্বারা নির্মিত। এই চার্চটি ৪০০ বছরের ও বেশী অধিক সময় ধরে কালের সাক্ষী হয়ে আছে। আওয়ার লেডি অব দ্যা হলি রোজারিও ক্যাথলিড্রাল নামে এই চার্চটি রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান গীর্জা।
পূর্ব বঙ্গের প্রথম খ্রীষ্ট সমাধির উপরেই চট্টগ্রামের ক্যাথিড্রাল গীর্জা টি নির্মিত হয়েছে।
১৬০০ খ্রীষ্টাদের শেষের দিকে পর্তুগীজ খ্রীষ্টান ব্যবসায়ীরা প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যেই এই গীর্জা নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রামে পর্তুগীজদের তৈরি এই গীর্জার ইতিহাস জানার আগে জানতে হবে চট্টগ্রামে পর্তুগীজদের আগমনের ইতিহাস সম্পর্কে। চট্টগ্রামে পর্তুগীজ শুরুর ইতিহাস আমাদের অনেকেরই কাছে অজানা। পর্তুগীজরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে সমুদ্র পথে চট্টগ্রামে আসেন ১৫১৮ খ্রীষ্টাব্দে।
চট্টগ্রামে পর্তুগীজরা প্রথম শুধু বর্ষা মৌসুমে ব্যবসা করতে আসতেন। বর্ষা শেষ হলে ফিরে যেতেন ভারতের গোয়ায়। কেননা গোয়া ছিল পর্তুগীজদের অন্যতম ঘাঁটি। তবে পরবর্তীতে পর্তুগীজরা চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন। এই সময় তারা তাদের উপাসনার জন্য বিভিন্ন উপাসনালয় বা গীর্জা নির্মাণ করেন।
১৬০০ ও সপ্তদশ শতকে পর্তুগীজদের লেখায় বার বার উঠে এসেছে সিটি অব বাংলার নাম। এই সিটি অব বাংলা ছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম পর্তুগীজদের লেখায় চট্টগ্রামের উচ্চারণ ছিল চাটিগা।পর্তুগীজ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে পর্তুগীজরা এসেছিলেন। আরো বহু পর্তুগীজ তাদের স্মৃতি চরণ আজও বহন করে চলে পাথরঘাটার এই চার্চটি।
১৫১৮ খ্রীষ্টাব্দে চট্টগ্রামের দিয়াং এ পাহাড়ি এলাকায় পর্তুগীজ বনিকদের হাত ধরে পূর্বে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা আসতে শুরু করে।
১৫৩৭ খ্রীষ্টাব্দ থেকে পর্তুগীজ বনিকেরা চট্টগ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। এই সময় ধর্মীয় বিষয় যত্নাত্তির খাতিরে দক্ষিণ ভারতের গোয়া এলাকা থেকে ১৫৯৮ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গদেশে প্রথম খ্রাষ্টান মিশনারীরা আসা শুরু করেন।
১৫৯৯ খ্রীষ্টাব্দে দিয়াং এ এই প্রথম গীর্জা নির্মাণ করেন ফাদার ফ্রান্সেসকো ফের্নান্ডেস। পরের বছর পাথরঘাটা এলাকায় ও জামাল খান এলাকায় দুটি আলাদা আলাদা চার্চ নির্মাণ করা হয়।
জানা যায় ফাদার ফ্রান্সেসকো ফের্নান্ডেস আরাগ্যা রাজার আর্থিক সহায়তা নিয়ে এই গীর্জাটি নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রাম শহরে অন্যতম প্রধান গীর্জাটি ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে পর্তুগীজ খ্রীষ্টানরা তাদের নিজস্ব প্রার্থনার জন্য নির্মাণ করেন।
১৬০০ খ্রীষ্টাব্দের ২৪ জুন সেন্ট জন দ্যা ব্যাপ্টিস নামে খ্রীষ্টানদের প্রথম গীর্জা স্থাপিত হয়েছিল। যে টি আরা কানিয়ারা মাত্র দুই বছর পর ধ্বংস করে ফেলেন।
১৬০২ খ্রীষ্টাব্দে আরা কানিয়াদের হতে ধ্বংস হওয়ার পর পরবর্তীতে ১৮৩৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম গীর্জা ধ্বংস স্তুপের উপর পুননির্মাণ করা হয়। বর্তমান তথ্য সূত্রে আরো জানা যায় ক্যাথিড্রাল গীর্জাটি ১৮৩৪ সালে ব্রিটিশ শাসন কালে নির্মিত হয়েছিল। এবং শেষ সংস্কারের কাজ করা হয়েছিল ১৯৩৩ সালে।
এই প্রাচীনতম গীর্জাটি এক একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই উপাসনালয়ে ৫০০ লোকের বসার মতো জায়গা রয়েছে। গীর্জার দেয়ালে শোভা পাচ্ছে যীশুখ্রীষ্টের মরাল ও তেল রঙের আকা ছবি। গীর্জার অভ্যন্তরে রয়েছে ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের সমাধি স্থান। এই সমাধি মূলে আছে সাধারণ খ্রীষ্টানদের পাশাপাশি এই গীর্জার দ্বায়িত্ব পালন কারী ফাদারদের সমাধি ও সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িতদের আপনজনরা এপিটাফে তাদের হৃদয়ের অনুভূতি লিখে রেখেছেন। এপিটাফের উপর লেখা অনুভূতি হৃদয় ছুঁয়ে যাবে যে কোন কারোর।
গীর্জার পূর্বদিকে রয়েছে বাংলার প্রথম খ্রীষ্ট শহিদ ফাদার ফ্রান্সেসকো ফর্নান্ডেস এর স্মরণে নিমিত্ত সৃষ্টি স্তম্ভ।
বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রাচীন এি গীর্জাটি দেশের অন্যতম প্রাতান্ত্রিক স্থান। যে স্থানে একইসাথে বয়ে চলেছে পর্তুগীজ বনিকেদের আগমনের ইতিহাস ও খ্রীষ্টান ধর্মালম্বীদের আওয়ার লেডি অব দ্যা হলি রোজারিও ক্যাথিড্রাল চার্চ দাঁড়িয়ে আছে।