মো:আনোয়ার হোসাইন,কুমিল্লা:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ১৪নং নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নে বৈধ এবং অবৈধ মিলিয়ে ১৬টি ইটভাটাসহ পুরো উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অব্যাহত বায়ুদূষণে এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নিয়মনীতি না মেনে ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা স্থাপন হলেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও এখানে প্রায় সব ফসলি কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটা । দীর্ঘদিন নিয়মনীতি না মেনে ধানসহ বিভিন্ন ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ১৪নং নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের সকল ইটভাটায়। ট্রাক দিয়ে দিন ও রাতে সমানতালে মাটি ও ইট পরিবহনের কারণে ভেঙে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় সব রাস্তাঘাট। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আশ-পাশের বাড়িঘর। চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কৃষিজমি। ফল হচ্ছে না বিভিন্ন ফল-ফলাদির গাছে। কৃষিজমিতে ভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র পেয়ে ভাটা স্থাপনের অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে ভাটা মালিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা-সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, যেসব জমিতে ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে এসব জমিতে ধান ও সবজি চাষ হতো। পরে এসব জমিসহ আশ-পাশের নিকটবর্তী জমিগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে আশ-পাশের সব জমি এখন আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কৃষিজমির মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে বড় বড় গর্ত করার ফলে আশ-পাশের ধানের জমিও ভেঙে পড়ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানায়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধারদেনা করে মাঠে ধানের চারা রোপন করেছিলেন তারা। ধানের শীষ গুলোতে ফুলও এসেছিল পযার্প্ত পরিমান। কিন্তু ইটভাটার ধোয়ায় তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল জ্বলেপুড়ে অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। অসহায় কৃষকদের বাচাঁতে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হাকিম মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, আমরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফসল চাষ করেছি। এখন ইটভাটার ধোঁয়ায় আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ জায়গায় আগে আমরা চাষ করে ধান ঘরে নিয়ে যেতে পেরেছি। এখানে যখন ইটভাটা করা শুরু হয়েছে, তখন থেকেই আমরা আর ধান চাষ করতে পারি না। ইটভাটার ধোঁয়ায় আমাদের সব ধান নষ্ট হয়ে যায়।
আবু তাহের নামে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় আমাদের স্বপ্নের সোনালি ফসল জ্বলেপুড়ে অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আমাদের সারা বছরে একটাই মাত্র ফসল হয়। সেই ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের কৃষকদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, মুরাদনগর উপজেলার মতো বাংলাদেশে এমন আর কোন উপজেলা আছে কিনা আমি সন্দিহান। যেখানে চোখ খুললেই শুধু দেখা যায় ইটভাটা আর ড্রেজার। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছর পর মুরাদনগর উপজেলায় কৃষি কাজ করার জন্য কোন জমি পাওয়া যাবে না। সময় থাকতেই লাগাম টেনে ধরা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। কৃষকরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে অবশ্যই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।