নিজস্ব প্রতিবেদক :
দীর্ঘ সাড়ে পনের বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটিয়ে জুলাইয়ের ৩৬ দিনে যেই ছাত্র জনতার রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ বদলে দিয়েছে সেই বদলে যাওয়া ন্যারেটিভের উপর দাঁড়িয়ে আজকের এই বইমেলা বলেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন, গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে অমর একুশে বই মেলা উদ্বোধন করেন গৃহায়ন, গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
শনিবার ( ১ ফেব্রুয়ারী) উদ্বোধন হওয়া ২৬ দিনব্যাপী এ বই মেলা শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশে তো বইমেলা ৫২ সাল থেকেই হচ্ছে। ২১ উদযাপন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি খুবই ছোট আঙ্গিকে প্রচারণার জন্য স্মারক স্মরণিকা বের করে নিজেদের পাড়ায় পাড়ায় কিছু অনুষ্ঠান ছিল। ব্যাপকভাবে হয়তো বাংলা একাডেমী অনেক পরে করেছে। চিটাগং অনেকদিন আগে থেকে শুরু হলেও সেই সময় ছোট ছোট অঙ্গনে কিন্তু কাজ ছিল। কিন্তু আজকের যেই বাস্তবতা সেটা হচ্ছে এই সমস্ত উদ্যোগকে ছাপিয়ে বাংলাদেশকে বদলে দেয়ার উপরে দাঁড়িয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের যে সংগ্রাম, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, একটা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যে সফল সংগ্রাম সেটার উপরে দাঁড়িয়ে আজকের বইমেলা। আপনারা আপনাদের কথাগুলো লিখবেন। যেটা আমরা আশা করি এই সংগ্রামে অংশ নেয়া সমস্ত ছাত্রী এবং ছাত্র তাদের কথাগুলো লিখবেন। আমরা আশা করি শহীদদের কথা লেখা হবে। আজকে শহীদ ওমরের কবর জিয়ারত করতে গেছিলাম। আমাদের প্রতিনিয়ত যেন এ কথা মনে থাকে যে রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে কিন্তু আমরা আজকের বাংলাদেশে আছি। আমাদের যেন প্রতিনিয়ত মনে থাকে যে, যেই ঐক্য রচিত হয়েছিল পাঁচই আগস্ট সে ঐক্য যেন কোন অবস্থাতেই কোন শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা না করতে পারে। আমাদের যেন এই কথা মনে থাকে যে, যে কোন দুর্বলতার সুযোগে ফ্যাঁসিবাদ ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে। গণ মানুষের ঐক্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ যেটা আশা করে সেটা হচ্ছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। ২১ মানে মাথা নত না করা যে একটা কথা বলি আমরা, আমাদের ২১শে ফেব্রুয়ারি এবার যেন সেটা মনে রেখেই করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ছাত্র জনতা শ্রমিকের যে বিপ্লব ২০০৭ থেকে ২৪ পর্যন্ত মানুষের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সংগ্রাম সবকিছুই জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ থাকার কারণেই কিন্তু আমরা রাজপথে আন্দোলন করতে পেরেছি। দেখুন প্রতিটি জায়গায় কিন্তু ছাত্রদের ভূমিকা আছে। সেটা ৫২ বলুন, ৭১ বলুন, ৯০ বলুন, ২৪ বলুন। ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর সাথে শ্রমিক জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কাজে আজকে আমরা মনে করি পড়ার কোন বিকল্প নেই। তাইতো আমাদের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনের প্রথম আয়াতটা কিন্তু “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। আমাদেরকে পড়তে হবে এটার কোন বিকল্প নেই। আজকে বইমেলাতে প্রকাশনী সংস্থাগুলো সাজিয়েছে তাদের স্টলগুলো আপনারা সবাই কিন্তু সেখানে যাবেন এবং আমি আজকে আপনাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি সবাই কিন্তু বই কিনবেন। সবাইকে বই কিনতে হবে। কারণ আপনারা না কিনলে তারা উৎসাহিত হবে না। পরবর্তীতে তারা আরো বেশি উৎসাহিত হবে যদি আপনারা বই কিনেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আহসান হাবীব পলাশ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অমর একুশে বইমেলা চট্টগ্রাম-২০২৫ এর আহ্বায়ক চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, বইমেলার কমিটির সদস্য সচিব সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাবু, আলী প্রয়াস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ, চসিকের সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদসহ সংস্কৃতি জগতের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে শ্রেয়সী নামে একটি বইর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উদ্বোধন শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করেন অতিথিরা।