রেজি তথ্য

আজ: সোমবার, ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ৪ঠা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

দায়িত্বশীল পর্যটন বিকাশে জেলা প্রশাসন বান্দরবানের ভূমিকা

ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজ

মেঘআবৃত্ত পাহাড়, রূপালী নদী, ছুটে চলা দুরন্ত ঝরনা আর সবুজ উপত্যকার মায়াবী জনপদ বান্দরবান। অপার সৌন্দর্যের নৈবেদ্যে সাজানো বান্দরবানের প্রতিটি এলাকা। একেক ঋতুতে এর একেক রূপ। প্রকৃতি যেন সৌন্দর্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে এখানে। একে স্বপ্নরাজ্য বা স্বর্গরাজ্য দুই-ই বলা যায়। ভাষা-সংস্কৃতির বৈচিত্র্য আর প্রকৃতির বহুমাত্রিক উপাচারে অনন্য এই পার্বত্য জেলা। বাঙ্গালি ও ‍বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এখানে সম্প্রীতি বজায় রেখে একসাথে বসবাস করে যার ফলশ্রুতিতে বান্দরবানকে বলা হয় সম্প্রীতির বান্দরবান। নিসর্গের লীলাভূমি বান্দরবানের রয়েছে পর্যটনক্ষেত্রে বিপুল সম্ভবনা। ইকোট্যুরিজম, এগ্রো ট্যুরিজম ও কমিউনিটি বেসড ট্যুরিজম এখানে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উম্মোচন করতে পারে। এ জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবনমানও সমানুপাতিক ভাবেই উন্নত হবে।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আদি বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা এবং স্থানীয় স্বকীয় সংস্কৃতির কারণে বান্দরবানে দিন দিন পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঢেউ খেলানো এই মেঘ-পাহাড়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি ও জাতিগত বৈচিত্র্যের টানে ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকগণ বারবার ছুটে আসেন বান্দরবানে। পাহাড়ের সাথে মেঘের লুকোচুরি, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, সাঙ্গু নদী, নয়নভোলানো ঝর্ণার ধারা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন স্পট। দেশের সর্বোচ্চ সব পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, সাকা হাফং, বিজয়, কেউক্রাডংসহ রয়েছে অসংখ্য সারি সারি পাহাড়। রয়েছে বাংলার দার্জিলিংখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র নীলদিগন্ত, নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক যেখানে অনায়াসে মেঘের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশ গুলোতে রয়েছে চোখজুড়ানো ঝর্ণা নাফাখুম, আমিয়াখুম, রিঝুক, জাদিপাই, তিনাপ সাইতার, কুমারী ঝর্ণা, রুপমুহুরী ঝর্ণা, রুপালী ঝর্ণাসহ আরো অনেক ঝর্ণা। ১৯৯০ সালের দিকে তৎকালীন জেলাপ্রশাসকের হাত ধরে ‘মেঘলা’ পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে পর্যটন ক্ষেত্রে বান্দরবানের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, দেবতাকুম, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, তিন্দু, রেমাক্রি, তমাতুঙ্গী, আন্ধার মানিক, বড়মদক, বগালেক, কেওক্রাডং, মুনলাইপাড়া, আলীর গুহা, মারায়নতং, মিরিঞ্জা, উপবন লেক, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীতে নৌকা ভ্রমণসহ বর্ষা পরবর্তী প্রায় ১৫০-২০০ ছোট বড় ঝরণার সৌন্দর্য পর্যটকগণ উপভোগ করতে আসেন।
পর্যটনকেন্দ্র গুলো ছাড়াও বান্দরবানের পর্যটন শিল্পের অমিত সম্ভাবনার অন্যতম অনুষঙ্গ এখানকার নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য। ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বর্ণিল পোশাক পরিচ্ছদ, স্বকীয় খাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় আচার আচরণ সব কিছু মিলে বান্দরবানকে করেছে অনন্য। নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র গুলো পর্যটকদের নিকট পরিচিত হয়ে উঠলেও বান্দরবানের অসাধারণ নৃতাত্ত্বিক সন্নিবেশ এখনো পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশ পায়নি বান্দরবানের আগত পর্যটকদের নিকট। বান্দরবানের সংস্কৃতির সাথে পর্যটকদেরকে যত বেশি মেলবন্ধন ঘটানো যাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও সেই হারে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। জেলাপ্রশাসন পর্যটন মৌসুমে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ হতে আগত পর্যটকদের নিকট বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরছে। এছাড়াও, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীদের যেসব লোকজ সংস্কৃতি রয়েছে যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে জেলাপ্রশাসন বান্দরবান তা তুলে এনে পর্যটকদের নিকট উপস্থাপন করছে। প্রতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একদিকে পর্যটকরা যেমন সম্পূর্ণ নতুন এক সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছেন একই ভাবে বৈচিত্র্যময় উপায়ে বিনোদন লাভ করছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক সম্প্রীতিও পর্যটকদের বান্দরবানে নিয়ে আসবে।
বান্দরবানের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে উর্বর মাটি যেখানে বিশেষায়িত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে নানাবিধ ফসল ফলানো হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলা কৃষিক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। লাল/কালো/সাদা বিন্নীচাল, পেপেঁ, বাংলা কলা, মাল্টা, রসালো আনারস, ড্রাগনফল, রামবুটান, ব্রাজিলিয়ান ফল জাপাটিকা, ব্লাকবেরী, কফি, কাজুবাদামসহ নানান জাতের আম যেমন- রাংগুয়াই বা বুকচেরা আম, আম্রপলি, বানানা ম্যাংগো, সূর্যডিম আম ইত্যাদি নানান ফল-ফসল উৎপাদন করছে বান্দরবানবাসীরা। তাছাড়া, বান্দরবানের উন্নতমানের হলুদ, আদা, ফুলের ঝাড়ুর চাহিদা রয়েছে সারা দেশ ‍জুড়ে। আগত পর্যটকদের সাথে এই সকল ফসল উৎপাদনকারী কৃষকদের সরাসরি সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিকশিত করা যাবে এগ্রো ট্যুরিজমকে। এসব ফল-ফসল পর্যটকদের নিকট যত বেশি সহজলভ্য করা যাবে বান্দরবানের অর্থনীতিতে তত বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেহেতু অনেক পর্যটক সাথে করে এসব ফলমূল, উৎপাদিত পণ্য নিয়ে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য মনে করেন, যেহেতু তাদের এবং বান্দরবানের কৃষকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার জন্য রয়েছে কেনা বেচার ‘একশপ’ অনলাইন প্লাটফর্ম। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে এই একশপ পরিচালনা করা হয়। তবে আগ্রহী কৃষকগণও এ একশপের মাধ্যমে ক্রেতার সাথে সংযুক্ত হতে পারছেন। এতে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সহজেই পৌছে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে। যেকোন স্থানে বেড়াতে গেলে পর্যটকের মাঝে সে স্থানের প্রসিদ্ধ কোন খাবার কিংবা ঐতিহ্যবাহী পণ্য নেবার সংস্কৃতি সারা বিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও বিদ্যমান। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র গুলোর আশে পাশে বিপণন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে বান্দরবানের মানুষের তৈরীকৃত শাল, মাফলার, কাথাঁ-কম্বলসহ উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলো পৌছে দেয়া হচ্ছে পর্যটকদের হাতে। বান্দরবানের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলো দূর্গম পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মাচাং আকৃতির ঘর তৈরী করে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে। এদের বেশীভাগই জুম চাষ করে এবং উৎপাদিত খাদ্যশস্য খেয়ে বেঁচে থাকে। জুমচাষের পাশাপাশি অবসর সময়ে তাঁরা বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত কাঠ-বাঁশের পণ্য তৈরী করে। কিন্তু দূর্গম এলাকায় বসবাস করায় এসব পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা তারা করতে পারেনা। যদিও এসব পণ্য বিক্রির মাধ্যমে তাদের নগদ অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে। বান্দরবানের এসব প্রান্তিক প্রতিভাবান কুটিরশিল্প উদ্যোক্তাদের তৈরীকৃত বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী গহনা, বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন গৃহস্থালী সামগ্রী বাজারজাতকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন জেলা প্রশাসন। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বান্দরবানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা যাবার সময় এখানে উৎপাদিত পণ্যগুলো সাথে করে নিয়ে যেতে চান। জেলা প্রশাসন বিশ্বাস করে এইসব প্রতিভাবান উদ্যোক্তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এদের উৎপাদিত পণ্য যতবেশি পর্যটকদের নিকট পৌছে দেয়া যাবে তত দ্রুতই এ পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হবে। তাই জেলা প্রশাসন নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে “ব্র্যান্ডিং শপ” স্থাপন করেছে যেখানে প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের তৈরীকৃত পণ্যগুলো তাদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করে এ শপের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এতে উদ্যোক্তাদের সাথে পর্যটকদের সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন সম্ভব হয়েছে। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় অসহায় নারীদের এ শপে ‘সেলসম্যান’ হিসেবে চাকরী প্রদানের মাধ্যমে কর্মংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বান্দরবানের পর্যটন খাতের আরেকটি সম্ভাবনাময় খাতের নাম কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম। এই ট্যুরিজম এর বিশেষত্ব হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের বাড়িতেই পর্যটকরা অবস্থান করেন। সেখানেই খাওয়া দাওয়া করেন সাথে সাথে পাহাড় আর ঝর্ণাধারার সৌন্দয্য উপভোগ করতে পারেন। এতে করে পর্যটকরা অল্প খরচেই স্থানীয় বাসিন্দাদের বৈচিত্র্যময় জীবনাচার সম্পর্কে জানতে পারেন, তাদের তৈরী স্থানীয় বৈচিত্র্যময় খাবার উপভোগ করতে পারেন। পক্ষান্তরে স্থানীয় জনগোষ্ঠীরা আবাসন ও খাবার সরবরাহের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়া কমিউনিটি ট্যুরিজম ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বেশ সুনাম অর্জন করেছে এবং প্রতিনিয়তই সেখানে পর্যটকদের সমাহার ঘটছে। এক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে আরো বেশি সংখ্যক পাড়াকে কমিউনিটি ট্যুরিজম এর আওতাভুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
একটি অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের পূর্ণ বিকাশের জন্যে সেখানে পর্যটকদের নিরাপত্তা খুবই জরুরী। এ লক্ষ্যে যত বেশি দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে পর্যটকরাও তত বেশি উৎসাহিত হবেন সেসকল পর্যটন স্থানগুলো পরিদর্শন করতে। বিশেষত পার্বত্য জেলা হিসেবে বান্দরবানের পর্যটকদের নিরাপত্তা যেন কোন ভাবেই এ জেলার পর্যটন খাতের বিকাশের অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায় সেজন্য জেলা প্রশাসন অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত মেঘলা, নীলাচল, পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা কর্মীদের নেইমব্যাজ সম্বলিত নির্দিষ্ট পোষাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পর্যটন স্থান গুলোতে নিরাপত্তা সতর্কতা সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। বান্দরবানে ট্যুরিস্ট পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্র্যান্ডবুক, হ্যান্ডবুকের মত প্রকাশনাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম্বার সংযুক্ত করে তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্যুরিস্টদের জন্য পকেট বুক আকারে ‘ট্রাভেল গাইড’ প্রকাশ করা হয়েছে। বান্দরবানকে শতভাগ নিরাপদ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল অংশীজনকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও ‘রেসপনসিবল ট্যুরিজম’ এর অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ও নারীদের জন্য ভালমানের টয়লেট নির্মাণ করে তা ব্যক্তিপর্যায়ে ইজারা দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন পর্যটকরা পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার করতে পারছে তেমনি ইজারাদারের আয় হচ্ছে। তাছাড়া, দুগ্ধপোষ্য শিশু ও মায়ের কথা বিবেচনায় ‘মেঘলায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার ও মায়েদের নামাষের স্থান তৈরী করা হয়েছে। মেঘলাও নীলাচলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
বিআইডিএসের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের দরিদ্রতম জেলারগুলো মধ্যে বান্দরবান অন্যতম। এ জেলার মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘকাল ধরে জুম চাষ ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের কোন পেশা ছিল না। বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে পর্যটনের যে বিপুল সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য নিরসন করা সম্ভব। পর্যটকদের জন্য এখানে আছে প্রশিক্ষিত রেজিস্টার্ড ট্যুরগাইড। পর্যটকদের আবাসনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় সরকারী, বেসরকারী কিংবা ব্যক্তি পৃষ্টপোষকতায় গড়ে উঠছে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, আবাসন ব্যবস্থা। পাহাড়ী ঐতিহ্যবাহী খাবার ও সাধারণ স্বাভাবিক খাবার সরবরাহের জন্য গড়ে উঠেছে শতাধিক রেস্টুরেন্ট। এসব হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টে কাজ করছে বান্দরবানের স্থানীয় মানুষ। এসকল হোটেল রেস্টুরেন্টের মানউন্নয়ন এবং ট্যুর গাইডদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে জেলা প্রশাসন। বান্দরবানের রাস্তাগুলো সর্পিল ও উচুঁ-নীচু যেখানে বিশেষায়িত গাড়ী ছাড়া চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে গড়ে উঠছে বিশেষায়িত যানবাহন ব্যবস্থা। পাথুরে ঝর্ণার বুক চিড়ে নৌকায় চড়ে পর্যটকরা যায় তিন্দু, রেমাক্রি, বড়মদক, আন্ধার মানিক, নাফাখুম, অমিয়াখুম, দেবতাখুম, ভেলাকুমসহ বিভিন্ন ঝরণা দেখতে। সে কারণে এখানে চলে বিশেষায়িত নৌকা ও প্রশিক্ষিত মাঝি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলাপ্রশাসক সম্মেলন ২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিটি জেলার চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ও তৃণমূলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পর্যটনের অফুরান সম্ভবনা রয়েছে, এর প্রতিটি উপজেলায় এমন অসংখ্য স্থান রয়েছে যা ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে আকর্ষণ করে। তাই এ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে সাথে নিয়ে কম্যুনিটি ট্যুরিজমের বিকাশ করার দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে। পর্যটনের সাথে এগ্রো ট্যুরিজম ও এঅঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে সন্নিবেশ করতে পারলে বিদ্যমান অবস্থার মধ্যেও এ জেলার মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ঘটবে। পর্যটকরা এ অঞ্চলের আশীর্বাদ। পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধিতে সরকারের নানাবিধ উন্নয়নমূলক এবং সহায়তামূলক কার্যক্রম সমূহ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন সকল প্রতিষ্ঠানকে সাথে নিয়ে কাজ করছে। বান্দরবানের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারের সদিচ্ছার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে অচিরেই বান্দরবান বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে। তাই পর্যটনশিল্প বিকাশে জেলাপ্রশাসন সর্বাত্মক গুরুত্বারোপ করছে।

লেখক:ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি
জেলাপ্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১