‘আমাদের পৃথিবী, আমাদের ভবিষ্যৎ’, ‘বেঁচে থাকার অধিকার, চাই জলবায়ু সুবিচার’, ‘মুনাফা নয় মানুষ’, ‘গাছ লাগাও, পরিবেশ বাঁচাও’ ইত্যাদি নানা হাতে তৈরি প্ল্যাকার্ড হাতে শত শত শিশু ও যুবরা দাড়িয়েছে মানববন্ধনে। কেউ এসেছে কোন যুব সংগঠন থেকে, কেউবা এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোষাকে। সবার মুখে একটিই দাবি, ‘বিচার চাই, বিচার চাই, জলবায়ু সুবিচার চাই।’
শুক্রবার (২৫ মার্চ, ২০২২) সকাল ১০টায় নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে এই চিত্র দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরপ প্রভাব রুখতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে বিশ্বব্যাপী উপযাপিত বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের সমর্থনে এই কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন যুব সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই বছরের বৈশি^ক জলবায়ু ধর্মঘটের প্রতিপাদ্য ‘মুনাফা নয় মানুষ’ কে সামনে রেখে সেভ দ্য চিলড্রেন ও ইপসার সহায়তায় এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন যুব সংগঠনের নেটওয়ার্ক ‘বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স অফ ইয়ুথ’ (বে), আন্তর্জাতিক জলবায়ু এক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গ প্রতিষ্ঠিত ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ এবং ইয়ুথ নেটের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ইযুথ নেটের সদস্য উজ্জল ধর ও ইপসার মনিটরিং অফিসার সৈয়দ মোহন উদ্দিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করে ধর্মঘটে যোগ দেওযা বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধি ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেনী শিশু ও যুবরা। শিল্পায়ন ও উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ভারি কারখানা ও কর্মকা-ের মাধ্যমে যে বিষাক্ত গ্যাস বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে সেগুলোর নির্গমন বন্ধ করা না হলে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ গভীর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে।
তারা আরো বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন কেন সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ শিশু এবং যুবরা তাদের স্কুল কলেজ এবং অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে এই ধর্মঘট করছে। এর উত্তরটা খুব সহজ। আমরা ধর্মঘট করি কারণ আমাদের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছি। আমরা ধর্মঘট করি কারণ পরিবর্তনের এখনও সময় আছে, যত তাড়াতাড়ি আমরা কাজ করব, আমাদের ভবিষ্যত তত ভাল হবে।
জলবায়ু ধর্মঘট কোন সহিংস ধর্মঘট না উল্লেখ করে মানববন্ধনে উপস্থিত যুব প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা এখানে আজকে যারা উপস্থিত হয়েছি আমরা সবাই চট্টগ্রামের তরুন ও যুবসমাজের অংশ। আমাদের একটাই দাবি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। জলবায়ুর ন্যায়বিচার এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করা হোক।
বৈশি^ক জলবায়ু ধর্মঘটের সমর্থনে চট্টগ্রামের শিশু ও যুবদের ডাকা কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের বুঝতে হবে যে জলবায়ু সংগ্রাম হলো শ্রেনী সংগ্রাম। বছরের পর বছর ধরে ধনীরা বিভিন্ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে কোন অনুশোচনা ছাড়াই পৃথিবী আর তার বাসিন্দাদের ধ্বংস করতে তথাকথিত উন্নয়নের নামে বৈশি^ক বাস্তুতন্ত্র এবং জনগণকে বলিদান করছে। জলবায়ু সংকটের অন্যতম কারণ তাই মুনাফা। আমরা শিশু ও যুবদের দাবির সাথে পূর্ণাঙ্গরুপে ঐক্যমত পোষণ করছি এবং জোর দাবি জানাচ্ছি জলবায়ু সংকট নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন ইপসার সিনিযর প্রোগ্রাম অফিসার ওমর শাহেদ হিরো, ফ্রাইডে ফর ফিউচারের সদস্য মোজাম্মেল হক, সেন্টার ফর ইয়ুথ ডেভলপমেন্টের সদস্য আফরা আনওয়ার, শোভন চৌধুরী, প্রগতিশীল যুব সংঘের সভাপতি হেফাজুর রশীদ প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে শিশু ও যুবদের সাথে নিয়ে একটি র্যালি বের করা হয। র্যালিটি সিআরবি ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী শিশু ও যুবদের দ্বারা উদযাপিত জলবায়ু ধর্মঘটের নেপথ্যের নায়ক বহুল জনপ্রিয় জলবায়ু এক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গ। সুইডেনের একজন স্কুল শিক্ষার্থী যিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে জলবায়ুু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুইডেন সংসদের বাইরে প্রতিবাদ শুরু করেন। ২০১৮ সাল থেকে তার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিবাদ কার্যক্রম চলছে। ২০১৯ সালে ১১২টি দেশের আনুমানিক ১৪ লাখ শিক্ষার্থী তার ডাকে সাড়া দিয়ে জলবায়ু প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।
Discussion about this post