রেজি তথ্য

আজ: মঙ্গলবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কুকিমারার সংগ্রামী নারী উসাং মারমার এগিয়ে চলার গল্প

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই :

 গড়ে তোলেছেন সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারখানা

রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন ৫নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন এর  ৩নং ওয়ার্ডের জনবহুল পাড়া কুকিমারা মারমা পাড়া। প্রায় ১৮৫টি পরিবারের বসবাস।  জনসংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি।
শনিবার( ৯ এপ্রিল)   সকালে এই পাড়ায় এই প্রতিবেদকের আগমন। সাথে ছিলেন সেই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য অংচাপ্রু মারমা।
পাড়ায়  গিয়ে দেখা যায় ছোট্ট একটি বেড়ার ঘরে মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ঐ এলাকার বাসিন্দা উসাং মারমা। দূর্গম পাহাড়ী জনপদে উসাং মারমা গড়ে তুলছে নিজস্ব
ছোট্ট এক  সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারখানা। ২০১১ সালে  মাত্র ২ জন প্রশিক্ষনার্থী নিয়ে তিনি এই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ৩০ জনের মতো মেয়ে তাঁর এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাঁরা এক একজন একেক জায়গায় দোকান দিয়ে সেলাই কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
এই সময় এই প্রতিবেদককে  উসাং মারমা( ৩৭ বছর)  জানান, তাঁর স্বামী থোয়াইচিং মারমা একজন দিনমজুর। তাদের প্রথম  কন্যা সন্তান  এলিপ্রু মারমা পড়ে তৃতীয় শ্রেনীতে এবং  ২য়  সন্তান এলিচিং মারমা প্রথম শ্রেনীতে পড়ে। স্বামীর সবসময় কাজ থাকতো না, তাই আমিও ঘরের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য পরের  জমি এবং জুমে   দৈনিক ১ শত ৫০ টাকা মজুরিতে   কঠোর পরিশ্রম করে কাজ করতাম। যেন একটু সংসারে সুখ আসে। তিনি আরোও জানান, মাঝে মাঝে কাজ থাকে না, তাই অন্য কিছু করার চিন্তা সবসময় মাথায় থাকতো। তাই  নিজস্ব পরিশ্রমের টাকা মজুদ করে,প্রথমে একটা সেলাই  মেশিন ক্র্য় করি। পরে ২০১১ সালে  কুকিমারা পাড়ায় ৫শত টাকা ভাড়ায়  অন্যের বেড়ার ঘরে  ভাড়ার নিয়ে একটি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করি। প্রথমে ২ জন প্রশিক্ষনার্থী নিয়ে শুরু করি পথ চলা। তাদের কাছ থেকে মাসিক ৫ হাজার টাকা করে নিতাম। ইতিমধ্যে ৩০ জনের মতো আমার এই সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। বর্তমানে ৮ জন তাঁর এই কেন্দ্রে কাজ শিখছেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পোশাকের সেলাইয়ের অর্ডার নিয়ে বাড়তি উপার্জন করছেন বলে জানান।  এই পথে আসতে তিনি কোন সরকারি সহায়তা পাননি বলে জানান। যদি সরকারি সহায়তা পাই, তাহলে আমি অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবো।
তাঁর এই  প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে  মোটামুটি স্বাবলম্বী হয়েছেন কুকিমারা পাড়ার  হলাসুইউ মারমা ও  হ্লায়েচিং মারমা। তাঁরা জানান, উনার কাছ থেকে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন নিজেরা সেলাই কাজ করছি। আমাদের সংসারের সচ্ছলতা এসেছে।
কুকিমারা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য অংচাপ্রু মারমা জানান , আমি বছরের পর বছর এই মহিলার সংগ্রামের চিত্র দেখে আসছি। একটি মাত্র সেলাই মেশিন দিয়ে   তিনি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শুরু করলেও বর্তমানে  তিনটি সেলাই মেশিন তাঁর। এই সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এলাকার অনেক বেকার নারীরা প্রশিক্ষন নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
কাপ্তাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে আসছেন এবং উৎসাহ প্রদান করে আসছেন। ঐ মহিলা যদি সমাজসেবা বিভাগে ঋণের জন্য আবেদন করেন তাহলে আমি তাঁকে ঋণ দিয়ে তাঁর কাজের পরিধিকে আরোও বিস্তৃত করার চেষ্টা করবো।
 প্রান্তিক পাহাড়ী  জনপদে অবহেলিত উদ্যােমী নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আক্তকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বেকারত্ব দূরীকরণে   উসাং মারমার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০