দেশে উচ্চ মূল্যস্ফিতিরি এই সময়ে যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল, সেখানে প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ কমেছে। এটি সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম।প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হবে। কিন্তু এ বছর পেনশন, বৃত্তি ও সুদ বাদে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত বরাদ্দ এক শতাংশের মতো। এমনকি গত বছরের চেয়েও এবার বরাদ্দ কমানো হয়েছে।রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে সোমবার এসব কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে বাজেটের পর্যালোচনা পেশ করেন সানেমের গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সায়েমা হক।সায়েমা হক বলেন, এখনকার বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল মাথাপিছু সামাজিক ভাতার বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। একইসঙ্গে আমরা চেয়েছিলাম, ওপেন মার্কেট সেইল বা ওএমএসে বরাদ্দ বাড়ানো হোক। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, এবার উল্টো ওএমএসে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। তাঁর পরামর্শ, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ওএমএসে বরাদ্দ যেন কোনোভাবেই কমানো না হয়; কারণ এটা অত্যন্ত জরুরি।বৈষম্য প্রসঙ্গে সায়মা হক বলেন, ২০১৬ সালের পর সরকারি পরিসংখ্যান নেই। সেই ২০১৬ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের মোট সম্পদের ৩৮ শতাংশ ১০ শতাংশ শীর্ষ ধনীর হাতে পুঞ্জীভূত। আর কোভিডকালে বৈষম্য আরও বেড়েছে বলে জানা যায়, যদিও এ বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যান নেই। এ বাস্তবতায় বৈষম্য কমাতে তিনি কর কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেন। অর্থাৎ যার যত বেশি সম্পদ, তাঁর ওপর ততো বেশি হারে করারোপ করা, ইংরেজিতে যাকে বলে প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সানেমে নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, এ বছরের বাজেট পরবর্তী সময়ে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা প্রসঙ্গে যত আলোচনা হচ্ছে, বাজেটের মূল কাঠামো নিয়ে ঠিক ততটা হচ্ছে না। এটা সব দিক থেকেই অনৈতিক। সানেম এই নীতি সমর্থন করে না। তিনি বলেন, টাকা পাচার হলো কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।বাজেটের গতিমুখ প্রসঙ্গে সেলিম রায়হান বলেন, এই বাজেট বৃহৎ ব্যবসা-বান্ধব। কর্পোরেট ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা বড় বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু গত দুই বছরে দেশের ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে, তারা যেমন পুনরুদ্ধারে খুব একটা সহায়তা পায়নি, তেমনি এই কর ছাড় তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।তিনি আরও বলেন, তথ্যের ঘাটতি সবসময়ই একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা গেছে। বিশেষ করে কোভিডের সময় তা আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। তখন দেশের বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলো দারিদ্র্য নিয়ে বেশ কয়েকটি জরিপ করে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেরকম জরিপ বা গবেষণা করা হয়নি। আবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর জরিপ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সেলিম রায়হানের আহবান, সরকার বিশেষ করে বিআইডিএস দেশের অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটি সম্মেলন আহ্বান করতে পারে। সেখানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জরিপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারে। আমরা সেরকম অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অত্যন্ত উৎসাহী।
অনুষ্ঠানে সানেমের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post