চট্টগ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। যে কোনো সময় ব্যাপক প্রাণহানিসহ বড়বিপর্যয় ঘটতে পারে।ইতিহাস বলছে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পাহাড় কাটা শুরু হয়। পাহাড় কেটে বানানো হয় বাংলো, অফিস-আদালত। পাকিস্তান আমলেও পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতার পরও পাহাড় কাটা থেমে নেই। ‘৯০ এর দশকের থেকে পাহাড়কাটা রীতিমতো মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।চট্টগ্রামে পাহাড়ের ধসে প্রাণহানি এড়াতে এ সুপারিশটি করা হয়েছিল ২০০৭ সালে তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (রাজস্ব) আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) সদস্য সচিব করে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।তদন্ত কমিটিগুলো ভূমিধসের ২৮ কারণ চিহ্নিত করেছিল। এবং পাহাড় সুরক্ষায় ৩৬ সুপারিশমালা প্রদান করেছিল। পাহাড়ধসের ঝুঁকি কমাতে এবং পাহাড় রক্ষায় দীর্ঘ, মধ্যম ও স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ করা হয়। গত ১৫ বছরে একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি।নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়কাটা চলচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা দাপট দেখিয়ে পাহাড় দখল ও পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে যাচ্ছে।শুধু বৃষ্টি হলেই মাইকিং করা হয়, পাহাড় পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের সরিয়ে আনা হয়।২০০৭ সালে চট্টগ্রামের পৃথক সাতটি স্থানে পাহাড় ধসসহ ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর গঠিত তদন্ত কমিটি এ সুপারিশ করে। গত ১১ জুন,১৫ বছর পূর্ণ হইলেও ওই সুপারিশটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পাহাড়তলী এলাকার সীমানা প্রাচীর ভেঙে ১২ জনের মৃত্যুর জন্য গঠিত একটি কমিটি ১৪টি এবং নগর ও আশেপাশের এলাকায় ভূমিধসে প্রাণহানির জন্য গঠিত কমিটি ৩৬টি সুপারিশ করে। একই ঘটনায় সিডিএমপির (সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি) পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক মাকসুদ কামালকে প্রধান করেও গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এ কমিটির ২২ দফা সুপারিশ ছিল। অর্থাৎ ২০০৭ সালের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনাকে ঘিরে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর ৭২ টি সুপারিশ করে। যার বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। গত ১৫ বছরে নগরে ও আশেপাশে পাহাড় ধসে ২৪৩ জন প্রাণ হারায়। ২০০৭ সালের পাহাড় ধসের পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) সদস্য সচিব করে গঠন করা হয় ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’। এ পর্যন্ত ২৭টি সভা করেছে ওই কমিটি। প্রতিটি সভায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করে তাদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বাসায় অবৈধ ইউটিলিটি সার্ভিস অর্থাৎ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও সিদ্ধান্ত হয়।এ বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের তালিকা করার জন্য পাহাড়ের মালিক ও বিভিন্ন সংস্থাকে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। একটি সংস্থা ছাড়া কেউ তালিকা দেয়নি। তাদের অসহযোগিতার কারণেই বিলম্ব হচ্ছে। তবে তাদের উপর নির্ভর করে আমরা বসে নাই। আমাদের এসিল্যান্ডদের মাধ্যমে তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এদিকে সাস্প্রতিক সময়ে তালিকা না করলেও ২০১৫ সালে করা সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, নগরে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় আছে।এরমধ্যে ১৭টি অতিঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়।তবে গত কয়েক বছরে বর্ষাকালে উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। ওসব অবৈধ বসবাসকারীরা আবারো ফিরে আসে পাহাড়ে।
Discussion about this post