রেজি তথ্য

আজ: শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

উজার বনাঞ্চল নির্বিগ্নে তামাকচুল্লিতে পুড়ছে কাঠ

আবু রাসেল সুমন,খাগড়াছড়ি :
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় বনাঞ্চল উজাড় করে নির্বিগ্নে তামাক চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। রাতের আধারে বা দিনে দুপুরে কাঠ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়নের বাগান থেকে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ শতাধিক চুল্লিতে তামাক পাতা পোড়ানো হচ্ছে। এসব চুল্লি নির্মিত হয়েছে  ফসলি জমির পাশে বা কারো বাড়ির আঙ্গিনায় চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে হাজারো মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতিটি চুল্লিতে দিনে কমপক্ষে ২০/৩০মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিটি চুল্লিতে গড়ে ১০জন শ্রমিক কাজ করেন। তাছাড়া তামাক ক্ষেত থেকে পাতা তোলা থেকে শুরু করে সাজানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ১০হাজারের বেশি শ্রমিক, শ্রমিকের সংকট থাকায় এবং কম মুজুরীতে নারী ও শিশুদের তামাকচুল্লির কাজে লাগানো হচ্ছে।কৃষি অফিস সূত্রে,উপজেলায় এ বছর ৯৬৩ একর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। উপজেলার মেরুং- লংগদু সড়কের দুইপাশে,গুলছড়ি, হাজাছড়া, বাঁচামেরুং, ছোট মেরুং ও কবাখালীর হাসিনসনপুর, মুসলিমপাড়া সহ দীঘিনালা ও বাবুছড়া ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় তামাক চাষ করা হয়। চাষিরা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে তামাক ক্ষেত থেকে পাতা তোলা শুরু হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে পাতা শুকানোর কাজ। প্রতি মৌসুমে এক একর ক্ষেতের তামাক পাতা শুকাতে ৩০০ মণ কাঠ প্রয়োজন হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাইনী নদীর দুইধারে করা হয়েছে তামাক চাষ। এছাড়াও মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নে তুলনামুলক ব্যাপক তামাক চাষ হয়েছে। ওই সব এলাকায় বাড়ির আঙিনা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থানে তামাক চুল্লি স্থাপন করে দিন-রাত পাতা শুকানোর কাজ চলছে।কবাখালী হাচিন সনপুর এলাকার তামাকচাষি মো. জহিরুল ইসলাম (৩২) বলেন, ‘আমি আড়াই একর জমিতে তামাক চাষ করেছি। একাই একটি তামাক চুল্লিতে পাতা পোড়াচ্ছি।’ চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কাঠ কিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাঁরা কোথা থেকে আনছেন, আমি জানি না।
প্রতি মন কাঠ বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৩৫ টাকায়, প্রতিদিন তামাক চুল্লিতে বিশ মণের অধিক কাঠের প্রয়োজন হয়। রাবার, জাম, কাঁঠাল সহ নানান জাতের এসব কাঠ অবৈধ ভাবে কেঁটে ওজন করে বিক্রি করা হয়।এক দশক ধরে তামাক চাষের সাথে জরিত মধ্যবেতছড়ি এলাকার মো. বাদশা মিয়া (৭২) বলেন, ‘এবছর ২ একর জায়গায় তামাক করেছি। ওজন করে কাঠ কিনে চুল্লিতে পোড়ানো হয়। এরপর তামাক পাতা বিক্রয়ের উপযোগী হয়। কাজের সুবিধার্থে বাড়ির পাশেই তামাক চুল্লি বসানো হয়েছে।
স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী বলেন ‘তামাক চুল্লিতে আগুন দেওয়ার পর সবাই আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এবছরেও কবাখালিতে কয়েকটি চুল্লি থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বসতির আসেপাশে চুল্লি থাকায় আগুন লাগার সম্ভবনা থাকে। অন্যদিকে তামাক পাতার গন্ধে শিশুদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকিতে রয়েছে।
দীঘিনালা পরিবেশ আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন জানান, ‘তামাক চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর কারণে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়ন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বন ধ্বংস হতে থাকলে পাহাড়ী এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান ‘উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর তামাক চাষ করা হচ্ছে। আমরা তামাকচাষিদের নিরুৎসাহিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু চাষিরা বাড়তি সুযোগ ও লাভের আশায় চাষ বন্ধ করছেন না। এখানে বন বিভাগ ও প্রশাসন তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রতিটি চুল্লিতে মোটা দাগে বনের কাঠ পুড়ানো হয়।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের মেরুং রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইয়াহিয়া জানান, ‘তামাক চুল্লিতে জ্বালানির বেশিভাগ আসে সামাজিক বনাঞ্চল থেকে। সংরক্ষিত বন থেকে নয়।’ অবৈধ ভাবে গাছ কেঁটে তামাক চুল্লিতে পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো জানান ‘আমার কাছে এ ধরণের কোন তথ্য নেই। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম জানান, কোথাও যদি আইনের লঙ্ঘন হয় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১