কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) গঠনের পর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ( ইউপিডিএফ) এর সাথে উভয়ের মুখোমুখি গুলাগুলিতে ৮ জন নিহত হয়, এটাই বড় ধরনের ঘটনা ছিলো।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার সশস্ত্র দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে ৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতেরন এই ঘটনা পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে বলে স্থানীয়দের মনে চরম আতংক বিরাজ করছে।
গতকাল ৬ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাতে উপজেলার খামতাং পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। এর আগে ২০২০ সালে গোলাগুলিতে জেএসএস সংস্কার এর ৬ জন নিহত হয়।স্থানীয়রা জানান,গত কয়েক সশস্ত্র একটি গ্রুপ খামতাং পাড়া স্কুলে অবস্থান করছে এমন খবরে অন্য একটি গ্রুপ রাতে হানা দেয়,রাত ৮ থেকে ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে দুই সশস্ত্র দুই গ্রুপ কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ
) এর মধ্যে দফায় দফায় গোলাগুলি চলে।গোলাগুলির ঘটনা থেমে গেলে শুক্রবার সকালে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে পোশাক পরিহিত গুলিবিদ্ধ লাশ মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পায়। নিহতদের পোশাক দেখে ধারনা করা হচ্ছে, নিহতরা সবাই কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র শাখা কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) এর সদস্য। এদিকে প্রশাসন নিহতের সংখ্যা ৮ জন দাবি করলেও আজ শুক্রবার সকালে কেএনএফ দাবি করে, নিহতের সংখ্যা ৭জন। সংস্কার পন্থী গ্রুপ এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনায় নিহতরা হলেন, ভান দু বম, সাং খুম , সান ফির থাং বম, বয় রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান ঙাক বম, লাল ঠা জার বম। নিহতদের ৬ জন উপজেলার জুরভারাং পাড়া এবং একজন পানখিয়াং পাড়ার বাসিন্দা, তারা সকলে বম সম্প্রদায়ের।এই ব্যাপারে রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান বলেন, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত্রের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তাদের নাম পরিচয় জানার জন্য কাজ করছে পুলিশ, আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।ঘটনার পর খ্যামতং পাড়ায় ১৭৫টি পরিবার আতঙ্কে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে খাবারের ব্যবস্থা করেছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৭ জুলাই সকালে সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা বাজার পাড়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস সংস্কার) এর জেলা শাখার সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা, সহ-সভাপতি প্রজিত চাকমাসহ ৬ জন নিহত হওয়ার পর এই প্রথম ৮ জন একসাথে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উপজেলাটিতে চরম আতংক বিরাজ করছে। উক্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।আরো জানা গেছে, গত ১২ মার্চ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃতুবরণ করে এবং দুই জন সেনা সদস্য আহত হয়। গত ১৫ মার্চ রুমা উপজেলার কেওক্রাডং এলাকায় সীমান্ত সড়কের কাজে দায়িত্বরত অবসর প্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আনোয়ার হোসেন। এ সময় ট্রাক চালক মো. মামুন ও শ্রমিক আব্দুর রহমানকে অপহরণ করে কেএনএফ। দুই জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ১৬দিন পর অবসর প্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আনোয়ার হোসেনকে মুক্তি দেওয়া হয়।এই ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো: তারিকুল ইসলাম পিপিএম বলেন, আমরা ৮ জনের লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি। নিহতদের নাম, পরিচয় ও কোন কারনে, কোন সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে তা জানতে পারিনি। সন্ত্রাসী কার্যক্রম বাড়ার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আরো বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধী গ্রেফতারে আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে সরকার পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করলে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপূর্ন জেলা হিসাবে বিবেচিত হতো এই জেলায় বাড়ছে সংঘাত। ২১ সাল থেকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে অশান্ত জেলা এখন বান্দরবান। বাঙালীসহ ১১টি জনগোষ্ঠীর বসবাস।সম্প্রীতির এই জেলায় আদোও কি শান্তি ফিরবে? এমনই প্রশ্ন স্থানীয়দের।
Discussion about this post