কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে আসন্ন বর্ষায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।বৃহৎ বাজারের আড়াই সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি -বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও পার্শ্ববর্তী জাগির পাড়ার শতশত পরিবার পানিতে নিমজ্জিত হতে পারে।স্থানীয় আলমাছিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার আশেপাশে ফসলি জমিতে হঠাৎ করে দালান-কোঠা, ঘরবাড়ি, দোকান-পাট নির্মাণ এবং মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের সড়কের ব্রিজটি একপ্রকার বন্ধ করে ফেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি চলাচলের এ নালায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় বাজার ও জাগির পাড়া পানিতে সয়লাভ হয়ে উঠবে। অথচ শত বছর ধরে এ ব্রিজ দিয়ে বাজার ও জাগির পাড়ায় জমে থাকা সকল প্রকারের পানি নিষ্কাশন হত। অথচ এখন বস্তা দিয়ে কালভার্টটির মুখ বন্ধ করে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক দোকানপাট।জানা যায়, ঈদগাঁও উপজেলা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে বাজারের আশপাশে কৃষি-অকৃষি জমি ক্রয় করে প্রতিযোগিতামুলক চলছে দালান, বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণের হিড়িক। এরই অংশ বিশেষে জাগির পাড়ার পশ্চিমের বিলে গড়ে তোলা হচ্ছে দালানকোঠা, বসতবাড়ি ইত্যাদি। এতে ভরাট করা হয়েছে পানি চলাচলের রাস্তাও। রাতারাতি নিজেদের জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় বর্ষা মৌসুমী এতদ এলাকায় ভয়াবহ দূর্যোগ দেখা দিতে পারে। এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার উদ্বিগ্ন লোকজন।এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মমতাজ আহমদ জানান, যে বা যারাই করুক না কেন কাজটি অত্যন্ত অমানবিক হয়েছে। আসন্ন বর্ষাতে পুরো বাজার ও জাগির পাড়া পানিবন্দী হয়ে পড়বে। পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোন সুযোগ না থাকায় জলমগ্ন থাকতে হবে এসব এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি গুলোকে।একই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জয়নাল আবেদীন জানান, শত বছর ধরে আলমাছিয়া মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের ব্রিজ দিয়ে ঈদগাঁও খালের পাহাড়ি ঢলের পানি বাজার ও জাগির পাড়া প্লাবিত করে এ কালভার্ট দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে আসছে। এখন সেটি এক প্রকার বন্ধ করে দেয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনকে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়তে হবে।স্থানীয় জাফর আলম, আবু সালেহ, রাশেদুল আমির চৌধুরীসহ অনেকেই এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।তারা বলেছেন, বাজারের প্রায় আড়াই হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদের পানি ড্রেন দিয়ে আলমাছিয়া মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের কালভার্ট এবং ঈদগাঁও- চৌফলদন্ডী সড়কের সওদাগর পাড়ার মোনাফ সওদাগরের দোকানের পাশের কালভার্ট দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে দক্ষিণ মাইজ পাড়া ও ঘোনাপাড়া দিয়ে চৌফলদন্ডী নদীতে মিশে যেত।দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মোনাফ সওদাগরের সামনের কালভার্টি বহু আগে ভরাট করে দোকানপাট তৈরী করে ফেলেছে জমির মালিক।সরেজমিনে দেখা যায়, সম্প্রতি মাদ্রাসার পশ্চিম পাশের কালভার্টটিও ভরাট করে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এখানকার কৃষি জমিতে মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে স্থাপনা।ব্যবসায়ীরা জানান, এর ফলে বাজারের হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা পানির নিচে তলিয়ে যাবে ৷ স্থানীয় জাগির পাড়ার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী বলেন, আবহমানকাল থেকে এ দুটি কালভার্ট দিয়ে বর্ষাকালের পানি চলাচল করে আসছিল। কালভার্ট দুইটি ভরাটের পাশাপাশি কৃষি জমিও ভরাট করার ফলে পানি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হবে তার এলাকার হাজারো মানুষজনকে।তিনি অতিসত্বর পানি চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হক চৌধুরী রিকো বলেন, বাজারের ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনিতেই নাজুক। তা সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। উপজেলা প্রশাসনের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে পানি চলাচলের একটা নকশাও এঁকেছিলেন৷কালভার্ট ও পানি চলাচলের জমি ভরাট করে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়বেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।শিগগিরই বাজার পরিচালনা পর্ষদের মিটিং ডেকে বিষয়টি রেজুলেশন আকারে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করবেন বলে জানান তিনি।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ঈদগাঁও উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসান তারেক জানান, বিষয়টি নিয়ে বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পর্ষদ ও পরিবেশ কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।তিনি পানি নিষ্কাশনের সুযোগ সৃষ্টি না করলে বাজারবাসী, জাগির পাড়াবাসী ও বৃহত্তর মাইজ পাড়াবাসী দারুন বিপাকে পড়বেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।উক্ত এলাকার দুবাই প্রবাসী বেদার মিয়া জানান, পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসাবাড়ি, ব্যবসায়ী সহ বৃহৎ এলাকার সর্বস্তরের লোকজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ আলম জানান, এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান।বিষয়টির ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চেষ্টা চালিয়েও তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
Discussion about this post