মূল্য পরিশোধের ২৪ বছরেও মিলেনি ক্রয়কৃত রেলওয়ের জমি
জমি বিক্রয়ের দরপত্র বিজ্ঞপ্তির সর্বোচ্চ দরদাতা মনোনিত হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমির মূল্য সপূর্ণ পরিশোধের পর জমি বিক্রয় কবলা দলিল রেজিস্ট্রি ও দখল হস্তান্তর না করায় চীফ এস্টেট অফিসার (পূর্ব) এবং বিভাগীয় এ্যাস্টেট অফিসার (পূর্ব) বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রামকে আগামী ১ জুন ব্যাক্তিগত ভাবে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট । বেগম নাদিরা সুলতানার রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৯ মে) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
তথ্য মতে জানা যায়, আবেদনকারী বেগম নাদিরা সুলতানা বনাম রেসপনডেন্ট ১ – সরকার, ২- চীফ এ্যাস্টেট অফিসার (পূর্ব), ৩ – ডিভিশনাল এ্যাস্টেট অফিসার (পূর্ব) বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম। রিট পিটিশন নম্বর ১৩৩২৪/২০১৮। রুল ইস্যু হয় ১৫ ই জানুয়ারি ২০১৯ইং। রেলওয়ের মালিকানাধীন বিক্রয় অনুমোদিত জমির লট নম্বর ‘ক’ এর মূল্য বাবদ জমাকৃত ব্যাংক ড্রাফট নগদায়ন প্রসঙ্গে অবহিত করণ পত্র থেকে জানা যায় ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আগ্রাবাদ শাখা, চট্টগ্রাম এর পিও নং- ৯৫২০৮৫ তাং- ২৬/০২/১৯৯৮ মূলে ৬৯,২২৪/-, রূপালী ব্যাংক, জাহান বিল্ডিং শাখা, চট্টগ্রাম এর ডিডি নং- ৫১৪৩৮৪ তাং- ০১/১২/১৯৯৯ মূলে ৪,৩৮,৪১৭/-, উক্ত একই ব্যাংক শাখার ডিডি নং- ৫১৪৩৯৩ তাং- ০৭/১২/১৯৯৯ মূলে ৪,৩৮,৪১৭/- এবং সোনালী ব্যাংক, আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখা, চট্টগ্রাম এর ডিডি নং- ৫৯১৩০২২ তাং- ০৮/১২/১৯৯৯ মূলে ৪,৩৮,৪১৭/- উক্ত চার কিস্তিতে মোট ১৩,৮৪,৪৭৫/- জমির মূল্য পরিশোধ সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে প্রায় ৩ বছর পর জনতা ব্যাংক, আবদুল গনি রোড শাখা, ঢাকা এর পিও নং- ০৬৪৯৭৬৮ তাং- ৩/৯/২০০২ মূলে ১১৯/- পরিশোধ সহকারে সর্বমোট ১৩,৮৪,৫৯৪/- টাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিক্রয় লব্ধ অর্থ ব্যাংক হিসেবে জমা প্রদান করা হয় ও উক্ত ডিডি এবং পিও সমূহ মোতাবেক পরিশোধিত সপূর্ণ টাকা নগদায়িত হয়েছে মর্মে উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মহাপরিচালক এর কার্যালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে, অর্থ ও বাজেট শাখা, রেল ভবন, ঢাকা এর ১৯/৯/২০০২ ইং তারিখের নং-অর্থ-বাজেট/৪বা-২/৯৭-২৪০ মোতাবেক উক্ত সম্পূর্ণ টাকার প্রাপ্তি স্বীকার নিশ্চিত করেছেন। পরবর্তীতে মোঃ মোবারক উল্যা বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ রেলওয়ে/চট্টগ্রাম ২০০৫ইং সনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে জমি বিক্রয় কবলা দলিল ৪ (চার) ফর্দ্দে মোট ৫টি সীল স্বাক্ষর প্রদান পূর্বক উক্ত জমি বিক্রয় কবলা দলিল সম্পাদন করেছেন। ২নং রেসপনডেন্ট চীফ এ্যাস্টেট অফিসার (পূর্ব), বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম লিখিত ভাবে কয়েক দফায় চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেওয়ার পরেও উক্ত জমি বিক্রয় কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নাদিরা সুলতানা। ২ ও ৩ নং রেসপনডেন্টগণের পক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিজ্ঞ আইনজীবী মোঃ আক্তারুজ্জামান গত ০৯/০৫/২০২৩খ্রিঃ তারিখে রিট পিটিশনটি শুনানীর জন্য মহামান্য বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিজয়-৭১ বিল্ডিং এর ৭ নম্বর কোর্টে নির্ধারিত ১৪১ আইটেমে উক্ত রিট পিটিশনে এফিডেভিট ইন অপজিশন দাখিল পূর্বক হাজির হওয়ার পর উভয়পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণের উপস্থাপিত বক্তব্য শুনানী অন্তে হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি জে বি এম হাসান এবং রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ প্রকাশ্য আদালতে এই আদেশ প্রদান করেন।
রিট দায়েরকারী আইনজীবী ছিলেন এ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন আহমেদ এবং বর্তমানে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী মোঃ আলী হায়দার (অবসর প্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) ও ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন। এই বিষয়ে সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অবঃ) বলেন- ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের বেগম নাদিরা সুলতানা ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি বিক্রয়ের একটি দরপত্রে অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১৯ দশমিক ৭৫ কাঠা জমি ক্রয়ের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন এবং রিট পিটিশনে বর্ণিত আহতবীর- “উ” গবসড় ঘড়- এইও / পূর্ব / জমি বিক্রয় / জালানী ঘাট/ ৯৩ তারিখ ০৯/১২/১৯৯৮ মোতাবেক ২নং রেসপনডেন্ট চীফ এ্যাস্টেট অফিসার (পূর্ব), বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত উক্ত পত্র মোতাবেক দরপত্রটি গৃহীত হয়।
এই বিষয়ে রিট আবেদনকারীর পক্ষে সঙ্গীয় বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার পল্লব বলেন, বেগম নাদিরা সুলতানা ২৪ বছর আগে ক্রয়কৃত উক্ত জমির মূল্য পরিশোধ করলেও জমির দলিল রেজিস্ট্রি ও দখল হস্তান্তর করে দেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। তাই জমি দলিল রেজিস্ট্রি ও দখল হস্তান্তর করিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে তিনি রিট দায়ের করেছিলেন ২০১৮ সালে। হাইকোর্ট ২০১৯ সালে রুল জারি করেন এবং এই রুল শুনানিতে দুই কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে।
Discussion about this post