বান্দরবানে তিন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে নিহত হওয়ার পর একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার অংশ হিসেবে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন চাঁদাবাজিদের আখড়া আর সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য। প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ এবং প্রাণনাশের ঘটনা ঘটছে। সাধারণ পাহাড়ি-বাঙ্গালী থেকে চাঁদা উত্তোলন করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ তারই বাস্তব প্রমাণ মিলে গত সোমবার (৮ মে) বিকালে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়িতে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।নিহত সন্ত্রাসীরা হলেন- নেমথাং বম, লাল লিয়ন ও সিম লিয়ন। গণলাইনে কাজ করা হোন্ডা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও বাজার রসিদ ও চাঁদা হিসেবে কাজ করে ।এরা সকলেই বোম সম্প্রদায় ভুক্ত। আর বোমদের সকল তরুণ প্রজন্মই কেএনএ এর সাথে যুক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রাম-কে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হইতে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের অপপ্রয়াসে লিপ্ত সশস্ত্র সংগ্রাম করা ‘কেএনএফ’ এর সঙ্গেও এদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।স্থানীয় সূত্র ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি এবং আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইখ্যং পাড়ায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ডেমোক্রেটিক ) কিংবা মগ নিবারেশন পার্টি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) দু’টি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সকালে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর দু’পক্ষের অস্ত্রধারীদের মধ্যে কয়েক দফায় থেমে থেমে শতাধিক গোলাগুলি হয়েছে।এদিকে গোলাগুলির পর ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ এলাকা ছাড়তে থাকে। সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী চলে এই গোলাগুলি।এ সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনারস্থল থেকে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।স্থানীয়রা জানায়, “নিহত তিন জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে অস্থিতিশীল তৈরি করা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নিহতরা। কেএনএফ এর সঙ্গে কাজ করতো তারা।স্হানীয়দের মধ্যে ডেবিট বম নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “নেমথাং বম, লাল লিয়ান ও সিম লিয়ান দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকায় কেএনএ সোর্স, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন-গুমসহ নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচার জুলুম করে আসছিল। তারা কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গণলাইনের সোর্স হিসেবে কাজ করেছিল, ভাড়া মোটরসাইকেলের অন্তরালে তথ্য সংগ্রহ করে কেএনএফ গোয়েন্দা শাখার উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট ফ্লেমিং এর নিকট সরবরাহ করত এবং প্রায়ই তাদেরকে সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে দেখা যেত। তাদের হয়ে রুমা বাজারে ও বর্ডার রোড প্রজেক্টের ঠিকাদারীদের কাছ থেকে চাঁদা কালেকশন করতেও দেখা গেছে বলে জানা যায় । তাদেরকে বিগত বছরগুলোতে কেএনএফ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নাথান বম এর সঙ্গে দেখা গেছে। এছাড়াও রুমা ও থানচি লিক্রিতে কেএনএফ এর জন্য রসদ,বাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ কাজে তারা নিয়োজিত ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্মাণ শ্রমিক, ঠিকাদার ও পর্যটকরা রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি সড়কে প্রবেশ করলেই তারা সেই তথ্য কেএনএফকে সরবরাহ করত। এদের মধ্যে নেমথাং গোলাগুলির ঘটনার দেড় ঘন্টা আগে অস্ত্রসহ মোটরসাইকেলে মহড়া দেয়।ডেবিট বম এর বর্ণনা অনুযায়ী যারা নিহত হয়েছে তারা কেএনএফ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা মূলত মোটরসাইকেল ভাড়া চালানোর অন্তরালে গণলাইনের সোর্স হিসেবে কাজ করত এবং চাঁদা কালেকশন করাসহ রসদ সরবরাহ কাজে তারা যে নিয়োজিত ছিল তার সত্যতা পাওয়া গেছে।এছাড়া স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া যায়, নিহত সন্ত্রাসীদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষ করার পর কেউ নিতে আসেনি। তাই লাশ মর্গে দীর্ঘক্ষণ রেখে দেয়া হয়। নিহতরা কেএনএফ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই মামলার ভয়ে কেউ লাশ নিতে আসেনি এটা সুস্পষ্ট। নিহত সন্ত্রাসীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরবর্তীতে পাড়া হেডম্যানের নিকট লাশ পৌছানো হয়।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, সশস্ত্র সন্ত্রাসী দুগ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পাড়া হেডম্যানের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়।
Discussion about this post