রেজি তথ্য

আজ: মঙ্গলবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সমূহ সংশোধন না করে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ণ বাংলাদেশের বাঙালি জাতিসত্তা মেনে নিবে কি?

আলপিন মাহমুদ (কেপি) :

সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সমূহ সংশোধন না করে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ণ বাংলাদেশের বাঙালি জাতিসত্তা মেনে নিবে কি?

পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হল শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন। পাঠকের অনেকেই শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। তাই বুজার সুবিধার্থে শুরুতে শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপট নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বিষয়টি মানতে পারছিলনা ভারতের আসাম, মিজোরাম, ত্রিপুরা,লুসাই,তিব্বত, মিয়ানমারের কাচীন,চিন, রাখাইন হতে আগত (মাইগ্রেটেড) বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ ও গোত্রের উপজাতি বর্তমান কথিত আদিবাসী দাবিদার নাগরিক পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের একটি অংশ। যার কারণ ছিল আত্মস্বীকৃত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের অতিরিক্ত পাকিস্তান প্রীতি।

সেই ধারাবাহিতা রক্ষার্থে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ধীরে ধীরে পার্বত চট্টগ্রামকে বাংলাদেশে থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ১৯৭৩ সালে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির অন্তরালের তথাকথিত শান্তিবাহিনী গঠন করে! তাদেরকে অঘোষিত ভাবে সাপোর্ট দিত আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত- মায়ানমার।
তাদের দেশদ্রোহী এহেন কর্মকাণ্ডের ফলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ১৯৭৭ সালে শুরু হয় সামরিক বাহিনীর সাথে তাদের দীর্ঘ সংঘাত।
এ সংঘাত সুদীর্ঘ ২০ বছর চলমান ছিল যাতে অসংখ্য সামরিক এবং বেসামরিক লোক নিহত হয়।

১৯৯৭, ২-রা ডিসেম্বর বিদ্যমান এই সংঘাত সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সাথে কঠোর নীতি গ্রহণ না করে রাজনৈতিক সমাধানের আশ্রয় নেয়।
যার নামকরণ হল ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি।
যাতে সাক্ষর করে বাংলাদেশ সরকার এবং সন্ত্রাসী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর সভাপতি সন্তু মারমা।

এখন আসি মূল আলোচনায়।
শান্তি রক্ষার্থে বাংলাদেশ সরকার জেএসএস-এর সাথে যে ৪ খন্ডে ৭২ টি ধারার চুক্তি করছে তার অনেক গুলো ধারাই বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক চুক্তির ধারাগুলোর মাধ্যমেও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। ১৬ কোটি মানুষকে অগ্নিশর্মা করে তুলেছে!
দেশের সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ণ করলে দেশের স্বাধীনতা এবং স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে নিঃসন্দেহে। যা বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দর রউফের উত্তরসূরিরা এবং বাংলার অপ্রতিরোধ্য জনতা কখনো মেনে নিবেনা।
দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের স্বঘোষিত কিছু কতিপয়শ্রেণীর ভাড়াটিয়া বামপন্থী ও নাস্তিক বুদ্ধিজীবী আছে যারা সন্তু লারমার উৎকোচ গ্রহণ করে তার সাথে সুর মিলিয়ে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ণ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে থাকে। অথচ এই কতিপয়শ্রেণী কখনো এই কথাটি বলেনা পার্বত্য চুক্তির পরেও পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারী বিদ্দমান কেন?
কথিত এই বুদ্ধিজীবীরা নিজেদেরকে দেশপ্রেমিক দাবি করলেও দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক শান্তিচুক্তির এই ধারা সমূহ তাদের চোখে পড়েনা।
ঐ সমস্ত জ্ঞানান্ধ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বঘোষিত কথিত বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞাতার্থে এবং দেশ প্রেমিক জনগণের সচেতনতার জন্য বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে শান্তিচুক্তির সাংঘর্ষিক ধারা সমূহ উপস্থাপন করছি।

(ক) শান্তিচুক্তির ‘ক’ খন্ডের ১ নং অনুচ্ছেদে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বলা হয়েছে ‘উপজাতি অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল’ যা বাংলাদেশ সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামে পরিচিত হইবে।”
এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে পৃথক করা হয়েছে এবং পার্বত্যে বসবাসরত ৫০% বাঙালি জনগোষ্ঠীকে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

(খ) বাংলাদেশ একটি এক কক্ষ বিশিষ্ট রাষ্ট্র। যেখানে আঞ্চলিকতার কোন স্বীকৃতি নেই।
কিন্তু শান্তিচুক্তির ‘গ’ খন্ড অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। এটিও সংবিধানের ১ নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
সংবিধানের পরিপন্থী অবৈধ আঞ্চলিক পরিষদে আবার অনির্বাচিত সন্তু লারমাকে চেয়ারম্যান বানিয়ে ও প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদা প্রদান করে সংবিধানের ৫৯ নং অনুচ্ছেদের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে।

(গ) শান্তিচুক্তির খ খন্ডের ২৬’ক’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামের বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমি সহ কোন জায়গা জমি ইজারা প্রদান,বন্দোবস্ত, ক্রয়বিক্রয় সহ সকল ক্ষমতা পার্বত্য জেলা পরিষদকে দেয়া হয়েছে।
যা সাংবিধানের ১৪৩ এবং ১৪৪ নং ধারার পরিপন্থী।
পাঠকের সুবিধার্থে সংবিধানের প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ১৪৩ এবং ১৪৪ নং ধারা উল্লেখ করছি

১৪৩। প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি
(১) আইনসঙ্গতভাবে প্রজাতন্ত্রের উপর ন্যস্ত যে কোন ভূমি বা সস্পত্তি ব্যতীত নিম্নলিখিত প্রজাতন্ত্রের উপর ন্যস্ত হইবে:

(ক) বাংলাদেশের যে কোন ভূমির অন্তঃস্থ সকল খনিজ ও অন্যান্য মূল্যসম্পন্ন সামগ্রী;

(খ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমার অন্তর্বর্তী মহাসাগরের অন্তঃস্থ কিংবা বাংলাদেশের মহীসোপানের উপরিস্থ মহাসাগরের অন্তঃস্থ সকল ভূমি, খনিজ ও অন্যান্য মূল্যসম্পন্ন সামগ্রী; এবং

(গ) বাংলাদেশে অবস্থিত প্রকৃত মালিকবিহীন যে কোন সম্পত্তি।

(২) সংসদ সময়ে সময়ে আইনের দ্বারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমা ও মহীসোপানের সীমা-নির্ধারণের বিধান করিতে পারিবেন।

১৪৪। প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্বে সম্পত্তি গ্রহণ, বিক্রয়, হস্তান্তর, বন্ধকদান ও বিলি-ব্যবস্থা, যে কোন কারবার বা ব্যবসায়-চালনা এবং যে কোন চুক্তি প্রণয়ন করা যাইবে।

(ঘ) জেলা পরিষদের অনুমতি ব্যতীত কোন জমি ক্রয় বিক্রয় করা যাবেনা বলে যে ধারাটি উল্লেখ করা হয়েছে তা সংবিধানের ৩৬ নাং অনুচ্ছেদের চলাফেরার স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক।
সাংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে
“জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ- সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।”

(ঙ) শান্তিচুক্তির ‘খ ‘ খন্ডের ৪ ( ঘ) এবং ৯ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক পার্বত্য চট্রগ্রামে কোন ব্যক্তিকে ভোটার হতে হলে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ্ কর্তৃক স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র গ্রহণ করা আবশ্যক।
এই অবান্তর ধারাটি সংবিধানের ১২২ নং অনুচ্ছেদের সরাসরি বিরোধী।

(চ) আইনের দৃষ্টিতে সমতা বিধানে সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে
“সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী”।
কিন্তু সংবিধানের এই ধারাকে অমান্য করে শান্তি চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তর বাংগালী জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত না করে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে!
যা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

(ছ) শান্তিচুক্তির খ খন্ডের ৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘কোন ব্যক্তি অ-উপজাতিয় কিনা এবং অ-উপজাতি হইলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের সদস্য তাহা সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান/ ইউপি চেয়ারম্যান /পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট সাপেক্ষ সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ স্থির করিবেন এবং এতদসম্পর্কে সার্কেল চিফের নিকট হইতে প্রদত্ত সার্টিফিকেট ব্যতীত কোন ব্যাক্তি অ-উপজাতি হিসেবে কোন অ-উপজাতিয় পদের জন্য প্রার্থী হতে পারবে না।
যা বাংলাদেশ সাংবিধানের ২৯ নং ধারার সাথে সাংঘর্ষিক।তাছাড়া রাজা প্রথা অনেক আগেই এদেশ থেকে বিলুপ্তি হয়েছে।আর সেখানে কথিত রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় কে চাকমা সার্কেল চীফ্ করা হয়েছে।একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে সত্যি বিষয়টি আশ্চর্যজনক।

(জ) শান্তিচুক্তির বিভিন্ন ধারার পার্বত্য বাঙালিদের অ-উপজাতি হিসেবে উপস্থাপন করে বাঙালি জাতীসত্বাকে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং নিন্দনীয়।

শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ণ করতে হলে সংবিধান পরিপন্থী সকল ধারা সমুহ অবিলম্বে বাতিল কিংবা সংশোধন করতে হবে। এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে পাহাড় থেকে অস্ত্রধারী সম্পূর্ণভাবে বিনাশ করে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।
শান্তিচুক্তিতে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সমুহ বাতিল বা সংশোধ না করে সরকার যদি শান্তিচুক্তি পূর্নবাস্তবায়ণ করতে চায় তার পরিণাম হবে ভয়াবহ।
৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত প্রিয় মাতৃভূমির এক ইঞ্চি ভূমিও আমরা অশুভ দেশদ্রোহী কোন বিচ্ছিন্নতাবাদীর হাতে তুলে দিতে দেবনা।
তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শান্তিচুক্তিতে সংবিধান সাংঘর্ষিক ধারা সমূহ বাতিল করে দেশের ১৬ কোটি দেশপ্রেমিক জনতার বিশেষ করে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙ্গালীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করুন।অন্যথায় অদুর ভবিষ্যতে দেশপ্রেমিক জনতা এই চুক্তি মানবে না।

লেখক – আলপিন মাহমুদ (কেপি)

কবি ও কলামিস্ট

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০