পাহাড়ের নেত্রী ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশসহ চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস গং এর বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ১৩ জুন (মঙ্গলবার) বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় চট্টগ্রামের নগরের চেরাগী মোড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধীষান তঞ্চঙ্গ্যা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ-সভাপতি অয়ন সেনগুপ্ত, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হ্লামিউ মারমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অন্বেষ চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার সাধারণ সম্পাদক উখিং মারমা প্রমুখ।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি বিনিময় চাকমার সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্তর চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অম্লান চাকমা। এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, “১৯৭১ সালের সময় এদেশের পাহাড়ি-বাঙালি সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি কিন্তু সেটিই এখন পাহাড়িদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্বত্য জেলায় সেনাশাসন পাহাড়ীদের জীবনকে অতিষ্ট করেছে। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন ল্যাফটেনেন্ট ফেরদৌস কর্তৃক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয় কিন্তু দীর্ঘ ২৭ বছর অতিক্রম হলেও আজ পর্যন্ত তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি।তিনি আরও বলেন, “একটি দেশের মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ভেদাভেদ না করে সঠিক মেধার মূল্যায়ণ করে রাষ্ট্রীয় কাজে সম্পৃক্ত করার মধ্যে দিয়ে এই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেসকল আদিবাসী জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের মৌলিক অধিকার প্রদান করে তাদের সংস্কৃতি ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।ধীষান তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “কল্পনা চাকমা শুধু পাহাড়ের নেত্রী ছিলেন না, তিনি বাংলাদেশের পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদেরও নেত্রী ছিলেন। বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে জিইয়ে থাকা বিচারহীনতার সংস্কৃতির বলিদান হয়েছেন কল্পনা চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার নামে যেসকল রাষ্ট্রীয় বাহিনী অবস্থান করছে অতীতে জুম্ম জনগণের উপর সংঘটিত গণহত্যায় তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হাত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ শান্তিপ্রিয় তাই ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়। সরকার যদি চুক্তি বাস্তবায়ন না করে তাহলে চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম জনগণ সরকারকে বাধ্য করবে।সমাবেশে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, “বর্তমান সরকার উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল করে চলেছে। কল্পনা চাকমা নিপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর ছিলেন। রাষ্ট্র কর্তৃক তার সেই কন্ঠকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তার প্রতিবাদী চেতনাকে রুখে দেয়া যাবেনা। আমরা এটা জানি কারা কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করেছে কিন্তু কেন এর সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না সরকারের কাছে এটাই প্রশ্ন। আইন এর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংঘটিত হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তিতে আঞ্চলিক পরিষদকে ক্ষমতায়নের কথা থাকলেও তা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।এছাড়া বক্তারা কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশসহ চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস গং এর বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।সমাবেশ শেষে চেরাগী মোড় থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রদক্ষিণ করে চেরাগী মোড় পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
Discussion about this post