রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রডের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং যুদ্ধের কারণে কাচা মালের সরবরাহ নেই এই অজুহাতে গত দুই সপ্তাহে বাজারে রডের দাম বেড়েছে প্রায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। গত ১৫ দিন আগেও যে রডের দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ হাজার টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৭ থেকে ৮৯ হাজার টাকায়।দেশের ইতিহাসে কখনও এত দাম বাড়েনি রডের। আর বাজারে বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় শঙ্কিত সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা।
গত বছরের নভেম্বরে দেশের বাজারে রডের টন সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকায় উঠেছিল, যা তখন ইতিহাসের রেকর্ড সংখ্যক দাম ছিল। তার আগে ওয়ান-ইলেভেনের (২০০৭-০৮) সরকারের সময় প্রতি টন রডের দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। গত বছরের নভেম্বরে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর চলতি বছরের শুরুতে রডের দাম কিছুটা কমে টনপ্রতি ৭৬ হাজার টাকায় নেমে আসে। তবে জানুয়ারির শেষদিকে এসে আবার বাড়তে থাকে রডের দাম। এর ফলে জানুয়ারিতেই ফের ৮০ হাজার টাকায় ওঠে প্রতি টন রডের দাম।
সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই ইস্যুতে রডের দাম বাড়ার পালে নতুন করে হাওয়া লাগে। এরপর গত কয়েকদিনে দেশের বাজারে প্রতি টন রডের দাম ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ৮ মার্চ ভালোমানের ১ টন রড কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮৬ থেকে ৮৯ হাজার টাকায়। কয়েকদিন আগে যা ৭৭-৮০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল। নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম প্রধান এই উপকরণটির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে অনেক। এ ছাড়া ঘাটতিও দেখা দিয়েছে কাঁচামালের। যেভাবে কাঁচামালের দাম বাড়ছে এবং সঙ্কট দেখা যাচ্ছে, তাতে সামনে আরও দাম বাড়তে পারে। এরই মধ্যে কাঁচামালের ঘাটতির কারণে কমে গেছে উৎপাদন। নগরীর আসাদ গঞ্জের ব্যবসায়ী ও বেলাল এন্ড ব্রাদার্স এর কর্ণধার মোঃবেলাল বলেন, গত দুই সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই রডের দাম বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, সকালে এক দামে বিক্রি হচ্ছে, তো বিকালে আরেক দামে। কখনও ৫০০ টাকা তো কখনও ১ হাজার টাকা বাড়ছে। এভাবে এখন প্রতি টন রডের দাম ৮৯ হাজার টাকায় উঠেছে। আমার জীবনে রডের এমন দাম আর দেখিনি। তিনি বলেন, এখন বিএসআরএমের রডের দাম টনপ্রতি ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা আর কেএসআরএম রড বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮৬ হাজার টাকা আর অন্যান্য রড বিক্রি হচ্ছে ৮৭ হাজার টাকায়। একটু পর এই দাম নাও থাকতে পারে। রডের দাম বাড়ার বিষয়ে হালি শহরের এক ব্যবসায়ী বলেন, যেভাবে রডের দাম বাড়ছে, তাতে আমরাও অবাক। দেখতে দেখতে রডের দাম টনপ্রতি ৮-৯ হাজার টাকা করে বেড়েছে। এখন রডের দাম বাড়ার কোনো হিসাব নেই। কী কারণে রডের এমন দাম বাড়ছে, তার সঠিক কারণ আমরা বলতে পারব না। রডের দাম বাড়ার বিষয়ে বিএসআরএম স্টিলের কোম্পানির উপ পরিচালক তপন সেন গুপ্ত বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব কিছুরই দাম বাড়ছে। যার প্রভাব পড়েছে অন্যান্য পণ্যের মতো রডের বাজারেও। বাজারে মঙ্গলবার প্রতি টন ৮৭ হাজার থেকে ৮৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক আছে। রডের ঘাটতি নেই। তবে সামনে কাঁচামালের সোর্স যদি বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অবশ্য এখনও ওই পরিস্থিতি আসেনি। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে বস্তাপ্রতি ২০ টাকা সিমেন্টের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। উদ্যোক্তারা বলছেন, সিমেন্টের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। প্রতিবস্তা সিমেন্ট উৎপাদনে ৫০-৬০ টাকা খরচ বেড়ে গেছে। এ আবস্থায় সিমেন্ট কোম্পানিগুলো টিকে থাকার স্বার্থে মূল্য সমন্বয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে নির্মাণকাজের মূল্যবান উপকরণ সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া দ্বিগুণ বাড়ায় অচিরেই দেশের বাজারে সিমেন্টের দাম ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
Discussion about this post