চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের চায়ের দোকানে বসাকে কেন্দ্র করে কর্মরত এক সাংবাদিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরদের বিরুদ্ধে। আজ সোমবার রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।মারধরের শিকার ওই কর্মরত সাংবাদিকের নাম দোস্ত মোহাম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও একটি অনলাইন পোর্টালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দুই নেতার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হলে শাখা ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক খালেদ মাসুদ ও উপদপ্তর সম্পাদক আরাফাত রায়হান।মারধরের শিকার দোস্ত মোহাম্মদ এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন৷ ঘটনার বর্ননা দিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি স্টেশনে একটি দোকানে চা খেতে গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের খালেদ মাসুদসহ বেশ কয়েকজন আগে থেকেই সেখানে ছিলেন। তিনি খালেদ মাসুদের টেবিলের পাশ থেকে খালি পরে থাকা একটি চেয়ার টেনে নিয়ে চা খাওয়ার জন্য বসেছিলেন।দোস্ত মোহাম্মদ বলেন, ‘চেয়ার নিয়ে বসার পর খালেদ আমাকে বলেন- ‘তুমি এটা কার অনুমতি নিয়ে নিয়েছো?’ আমি খালেদকে আগে থেকে চিনতাম, ও আমাদের জুনিয়র। তাই বললাম ‘তুমি করে বলছো কেন? আমাকে চিনো?’ এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে থাকা গরম চা’সহ চায়ের কাপ আমার মাথায় ছুঁড়ে মারে। দোস্ত মোহাম্মদের জানান,”আমি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলেন। এরপরও খালেদ মাসুদ বলেন, ‘তুই সাংবাদিক হইছোস তো কি হইছে?’ এ কথা বলেই তার সঙ্গে থাকা ১০-১২ জন আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা চায়ের কাপ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে থাকে এবং পেটে লাথি মারতে শুরু করে। এর মধ্যে আরাফাত রায়হান বেশি মারধর করেছে। বাকিদেরও চিনি। তবে সবার নাম এখন মনে করতে পারছি না। আমার কিডনিতে আগে থেকেই সমস্যা আছে। পেটে আঘাত পাওয়ায় পেট ফুলে যাচ্ছে, খুব অসুস্থ বোধ করছি। আমি চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।এদিকে ওই সাংবাদিককে মারধরের আহত হওয়ার পর প্রথমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। পরে ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জরুরী ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।জানতে চাইলে চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভাশীষ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একদিনের মধ্যে বমি হলে সিটিস্ক্যান করাতে হবে। এছাড়া রোগীর কিডনিতে সমস্যা ছিল বলে জানতে পেরেছি। ধারণা করা হচ্ছে পেটে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে কি-না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।অভিযুক্ত খালেদ মাসুদ, ও আরাফাত রায়হান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার ( সিএফসির) অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এ উপপক্ষটির নেতৃত্ব দিতেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক। তবে সম্প্রতি তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষ। বর্তমানে সিএফসির নেতৃত্ব দেন সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ।অভিযোগের বিষয়ে খালেদ মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারে বসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে ওই সাংবাদিকের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। এর জের ধরে হাতাহাতি হয়েছে। তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। আরাফাত রায়হান বলেন, খালেদ মাসুদের বান্ধবীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে হাতাহাতি হয়েছিল। তিনি এ হাতাহাতি থামাতে গিয়েছিলেন।জানতে চাইলে সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলা অতন্ত্য নিন্দনীয় কাজ। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিষয়টি জানাবেন।রেজাউল হক দাবি করেন, খালেদ মাসুদ, আরাফাত রায়হানসহ যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাঁরা ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটিয়ে থাকে৷ তিনি এসবের প্রতিবাদ করেন বলেই তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার কঠিন বিচার চান।সিএফসির বর্তমান নেতা মির্জা খবির প্রথম আলোকে বলেন, চায়ের দোকানে টেবিলে বসা নিয়ে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখে যদি ছাত্রলীগের কারো অপরাধ প্রমাণ হয় তাহলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করবেন।এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ওই সাংবাদিককে দেখতে গিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post