রেজি তথ্য

আজ: শুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত সেনাবাহিনী হতে পারে রোল মডেল

কামাল পারভেজ

খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা এই তিন পার্বত্য জেলা পার্বত্য চট্টগ্রাম হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌমত্বের ভূ-খণ্ড। এই পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিয় সম্প্রদায়ের বসবাস যেমন আদিবাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে ইতিহাসে তুলে ধরতে চাইছেন তেমনি অনেক বাঙালি পরিবারও আদিবাসী হিসেবে যৌক্তিক দাবী তুলে ধরতে চাইছেন। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি ও বাঙালী সমান জনগোষ্ঠীতে পরিনত হয়েছে। দেশ স্বাধীন পর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি উপজাতিরা শান্তিবাহিনী নামক একটা গেরিলা বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে তিন পার্বত্য জেলাকে একটা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে আলাদা রাষ্ট্রের দাবীতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিক বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল ২রা ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির আগ পর্যন্ত এই শান্তি বাহিনী নির্মম ভাবে ৩৬ হাজার বাঙালীকে হত্যা করে তার মধ্যে আমাদের দেশের গর্বিত দেশ রক্ষক সেনাবাহিনীর অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যও জীবন দিতে হয়েছে। তৎকালীনও সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি – বাঙালি উভয়ের নিরাপত্তার পাশাপাশি বাংলাদেশ সংবিধানে যে পাঁচটি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার কার্যক্রম গুলো অকাতরে চালিয়ে যাচ্ছে। বরঞ্চ বাঙালিদের চাইতে উপজাতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী, এবং তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী অকাতরে জীবন দিয়েছেন। গহিন জঙ্গল থেকে হেলিকপ্টার করে অনেক উপজাতিদেরকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে এসেছেন। তিন পার্বত্য জেলায় গহিন অরণ্যে বিশুদ্ধ কোমল পানির ব্যবস্হা করে যাচ্ছে। গহিন অরণ্যে থাকা গরীব দুঃস্থ অসহায় উপজাতিদের জন্য খাবারের চাল ডালের ব্যবস্হ করে সেনাবাহিনী নিজ কাঁদে করে পৌঁছে দিচ্ছেন। ক্যাম্পিং এর মাধ্যমে গহিন অরণ্যে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ঘাটের উন্নয়নে সেনাবাহিনী এক অনন্য ভূমিকা রাখছে। শান্তি চুক্তি হওয়ার পরও বর্তমান সময়ে উপজাতিয় কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি বিরাজমান করে তুলছে। বিভিন্ন সংগঠন তৈরি নামে নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আদিবাসী পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘোষণা একক আধিপত্য পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে দাবী আদায়ে নাকি তাদের এই আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের নামে চাঁদাবাজী ও মানুষ হত্যা করে চলছে। নিরাপত্তায় থাকা সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ চালাতেও এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ বিন্দুমাত্র দিদাবোধ করছেনা। শান্তি চুক্তির পরও অনেক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সেনাসদস্য এসব উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। ঐদিকে বান্দরবান জেলায় নতুন করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামক উপজাতিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি হওয়া তাদের স্লোগান No Full State No Rest তারা বিশ্রাম চায়না তারা চায় আলাদা একটা রাষ্ট্র। বান্দরবান জেলায় এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি হওয়ার পর গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন উপায়ে রাস্তায় মাইন্ডসেট মাটিতে পুতে রেখে হত্যা করে। তারপরও আমাদের দেশের সেনাবাহিনী রাগ-ঢাক দূরে ঠেলে দিয়ে উপজাতিদের পাশে দাঁড়ানো অপ্রতুল চেষ্টা চালিয়ে যান, ছুটে যান গহিন অরণ্যে থাকা মানুষ গুলোর জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাবার নিয়ে। মানবিক ও মানবতা কাকে বলে সেটা দেখা যায় পার্বত্য অঞ্চলে গেলে সেনাবাহিনীর দিকে তাকালে। সেনা সদস্যরা নিজের কাঁদে করে চালের বস্তা নিয়ে ছুটছে কয়েক কিলোমিটার দূর প্রান্তে। আমি বলেছিলাম বাংলাদেশ সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের কথা, কিন্তু চিন্তা করলে দেখা ব্রিটেনের যে মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার এবং সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার ইত্যাদি। এসবের সব অধিকারই পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠী দাবীদার ভোগ করছেন। এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী চাইলে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ গুলোকে নির্মূল করে দিতে পারে। কিন্তু এসব হত্যাযজ্ঞতে সেনাবাহিনী বিশ্বাস করেনা তারা চায় সকল সম্প্রদায় শান্তি বজায় রেখে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করবে। একটা অসাম্প্রদায়িক উদারচিন্তার জনগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে এই প্রত্যাশা করেন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১