সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের এক দশকে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল সত্যের অনুসন্ধান, সৃষ্টির সেবা এবং জ্যোতির্ময় মহান সুফিসাধকদের দেখানো পথেই সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু করে। বলা যেতে পারে সুফি ভাবধারায় গবেষণামূলক বহুমুখী একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। জ্ঞানচর্চা, কুরআন সুন্নাহ ও সুফিতত্ত্ব গবেষণা এবং অনগ্রসরদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তাসহ আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও মানবতার কল্যাণে দীর্ঘ এক দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছে সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই ফাউন্ডেশন মানুষকে নানামুখী সেবাদানের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি ও তরুণ প্রজন্মের চিন্তাশক্তিকে ইতিবাচক ধারায় বিকশিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলছে। দেশের ৫টি বিভাগের ১৫টি জেলায় বিস্তৃত পাশাপাশি ৫টি পাবলিক ও ৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুইটি মেডিকেল কলেজেও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশন ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাজ সংস্কার, ধর্মীয় সংযম, নীতি-নৈতিকতা, প্রেমের চাষাবাদ, শিক্ষা ও গবেষণা, পরস্পর সংলাপ ও সহমর্মিতাকে উৎসাহ দেয় এবং ইসলামের মধ্যপন্থা অবলম্বন করে।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সুফি গবেষক খাজা ওসমান ফারুকী বলেন, সুস্থ, সমৃদ্ধ আলোকিত চিন্তাশীল প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন নিয়ে জানতে চাইলে খাজা ওসমান ফারুকী আরও বলেন, যেকোন তত্ত্বেরই একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ থাকা প্রয়োজন।
ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ শেখ সাদী বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান মানবহিতৈষী এক সংগ্রামী মানুষ তিনি একাধারে সমাজ চিন্তক এবং তরুণ সুফি ধর্মতত্ববিদ। যার হাত ধরেই অনেক পথহারা তরুণ আলোর দিশা পেয়েছেন। এবং অনেক সেবামূলক কাজের সূচনা করেছেন। তিনি ফাউন্ডেশনের স্থায়ী প্রতিষ্ঠান করার জন্যে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে ২৪০ কাটা জমিতে আলোকবর্তিকা কমপ্লেক্স স্থাপনে কাজ শুরু করে ২০২১ সালে। কানিজ ফাতেমা হিফজুল কোরআন মডেল মাদ্রাসা,তাজরিয়ান শিশু সদন (এতিমখানা), বিররুল ওয়ালিদাইন বৃদ্ধাশ্রমসহ আন্তর্জাতিক মানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উচ্চতর সুফি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেখানে ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে।
বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সঙ্গীত ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে সুফিসাধকদের অবদান অপরিসীম। বিশ্ব সাহিত্যের দিকপাল ও সুফিসাধক, জালালুদ্দিন রুমি, খাজা মুঈনউদ্দীন চিশতি, শেখ সাদী, হাফিজ, ওমর খৈয়াম সহ অসংখ্য সুফিসাধকগণ সুফিতত্ত্বকে প্রকাশিত করেছেন অসাধারণ শব্দের যাদুতে। স্থান কালের সীমানা অতিক্রম করে তাঁরা সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যের কালজয়ী ধারা। সসীম শব্দের মধ্যে তাঁরা সৃষ্টি করেছেন অসীম ছন্দ আর এই ধারাবাহিকতায় এ ফাউন্ডেশন আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা ও গবেষণামূলক সাময়িকী ‘সুফিনামা’ প্রকাশ এবং সুফিভাবাদর্শকে নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করার লক্ষ্যে ‘সুফি স্পিরিচুয়াল একাডেমি’।
“শুভ চেতনায় সমৃদ্ধ হোক তারুণ্য” এই স্লোগানকে সামনে রেখে, নৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন জেলায়, স্কুল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং বিষয়ভিত্তিক সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে যাচ্ছে। এবং প্রতিষ্ঠা করেছে আলোকবর্তিকা পাঠাগার,সংগ্রহ করেছে ৭ হাজারের অধিক বই। জীবন প্রবাহিত হয় নানান ধারায়, বহুমাত্রিকতায়। এর বিকাশ ও অন্তর্গত মাত্রা উপলব্ধি সহজ নয়। এসবের মধ্যে যে মাত্রাটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আধ্যাত্মিকতা। একুশ শতকের শান্তিকামী নাগরিক হিসেবে আমরা মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগছি এবং অবিশ্বাস হতাশা আর বস্তুনির্ভর জীবনের দিকে এগিয়ে চলেছি। মূলত এমন যান্ত্রিক সুবিধা দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে বটে,কিন্তু এসব জটিলতা থেকে অব্যাহতি মেলে না। বাহ্যিক আরাম-আয়েশে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারে না, প্রয়োজন জীবনের মৌলিকত্বে প্রবেশাধিকার, সুফি সাধকদের জীবনের ঐতিহাসিক মর্মকথাগুলোকে ধারণ করে, ব্যক্তি ও সমাজ বিনির্মাণে আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে সর্বশেষ গবেষণাকে সামনে রেখে সুফি মেডিটেশন কোর্স চালু করেছে।
আত্মশুদ্ধতার সার্বক্ষণিক প্রয়াসের মাধ্যমে প্রকৃতির মর্মবাণী আহরণ করে, মহাপ্রাণ সুফিরা পৃথিবীতে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে দেন। স্রষ্টার ভালোবাসা ও সৃষ্টির সেবাই তাঁদের আদর্শ। ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও মানবতার ধর্ম। ইসলামের শান্তির বাণী মানুষের কাছে পৌছে দিতেই এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্টা করেছে সুফি সেন্টার।
সুফি ভাবাদর্শ উত্তেজনা সৃষ্টি নয়, অনুধাবনে বিশ্বাসী; কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী, ধ্বংসযজ্ঞে নয়, নির্মাণে বিশ্বাসী, কল্পনায় নয়, বাস্তবতায় বিশ্বাসী; ভোগবাদ ও প্রবৃত্তির অনুসরণে নয়, বরং ত্যাগ কুরবানি ও পরোপকারে বিশ্বাসী। সুফিভাবাদর্শের এই প্লাটফর্মে আগত সকল জীবনকে একান্তে একটা মঞ্চ দিতে চায় যেখানে কঠিন, তরল ও নির্মল জীবনানুভূতির কথা মানুষ ভাগাভাগি করে নিতে পারবে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, প্রেমানন্দ, সম্মান আর ভালোবাসায়। নদীর মতো বয়ে চলুক, হোক কিছু বই পাঠ, সেবা, প্রেম আর আলোর সঙ্গে ভালো বিকাশের আলাপনের প্রতিশ্রুতি নিয়েই পথ চলা সুফি স্পিরিচুয়াল ফাউন্ডেশনের।
Discussion about this post