রেজি তথ্য

আজ: শুক্রবার, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

কলাবুনিয়ায় কোন স্কুল নেই: পড়তে যেতে হয় দূর কোন গ্রামে

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই :

কলাবুনিয়া পাড়ার মেয়ে  উম্রাচিং মারমা। এই বছর কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি  কলেজ হতে তিনি  এইচএসসি পরীক্ষা দিল। চিৎমরম হাই স্কুল হতে মাধ্যমিক  এবং চিৎমরম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে  প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পন্ন করেছিলেন। চিংসাংমা মারমাও একই পাড়ার মেয়ে। কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার চৌধুরী ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে তিনি প্রাথমিক ,কাপ্তাই  শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনিও কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজ হতে চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষা দিল। আর কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার শিশু নিকেতন স্কুলে নবম শ্রেণীতে  পড়ছেন একই পাড়ার মেয়ে মিলিপুু মারমা।  তিনিও কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার  চৌধুরী ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেছেন। তাঁরা সকলেই  রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন এর ৬ নং ওয়ার্ডের কলাবুনিয়া গ্রামের  বাসিন্দা । কিন্তু তাদের এই গ্রামে নেই কোন প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় নির্মিত একটি পাড়া কেন্দ্রে তাঁরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এরপর প্রাথমিক স্থর হতে তাদেরকে যেতে হয় কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকার কোন বিদ্যালয়  বা কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় বা চিৎমরম এলাকার কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর যাদের সামথ্য আছে তারা জেলা শহরে গিয়ে পড়াশোনা করেন।  আবার এসব স্কুলে যেতে হলে কাউকে কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে কিংবা ঘন্টার উপর পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকলে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।গত ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার এই প্রতিবেদক যান এই পাড়ায়। লুসাই কন্যা কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত অনিন্দ্য সুন্দর এই গ্রাম। প্রায় ৩৫ টি মারমা পরিবারের বসবাস এই পাড়ায়। এসময় পাড়া কেন্দ্রের পাশে কথা হয় উম্রাচিং মারমা, চিংসাংমা মারমা, মিলিপ্রু মারমা সহ অনেকের সাথে।  তাঁরা সকলেই বলেন, এই পাড়া কেন্দ্রে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করার পর আমাদেরকে যেতে হয় বিভিন্ন এলাকায়। যেখানে আমরা প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করি। তবে যখন অন্যত্র ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়, তখন আমরা অনেক ছোট। তখন এই কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে যেতে ভয় লাগে। আমাদের মা বাবারা জুমে কাজ করে তাই অন্য অভিভাবকদের মতো তাঁরা আমাদেরকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারে না। অন্তত  পক্ষে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়া দরকার এই গ্রামে। যাতে করে আমাদের দু:খ লাগব হয়।এসময় দেখা হয় এলাকার কারবারি অংহ্লাচিং মারমার সাথে। তিনি বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা কি পরিমান কষ্ট করে অন্যত্র পড়াশোনা করতে যায়, তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। ছোট ছোট শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হয়ে কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকায় পড়তে যায়। নদীতে পানি বেড়ে গেলে কিংবা উজান হতে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীর স্রোতধারা বেড়ে গেলে ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে স্কুলে যেতে হয়। আমরা সরকারের কাছে এই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের আকুল আবেদন জানাই।৩ নং চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী বলেন, আমাদের চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদ হতে এই গ্রামটি অনেক দূরে।  শিক্ষা বিস্তারের জন্য এই গ্রামে নেই কোন স্কুল। শুধু মাত্র পাড়া কেন্দ্রে শিশুরা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে থাকে।  এই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন হওয়া জরুরী। কাপ্তাই উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার আচার্য্য বলেন, সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় বিদ্যালয় করতে আগ্রহী। প্রথম পর্যায়ে সারা বাংলাদেশে ১৫ শত প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের শেষে নতুন করে আরোও ১ হাজারটি বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু  সরকারের অন্যতম শর্ত হলো নূন্যতম ৩৩ শতক জমি সরকারের অনুকূলে রেজিষ্ট্রিকৃত হতে হবে। যদি এই এলাকায়  প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যায় তাহলে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১