রেজি তথ্য

আজ: শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

কর্ণফুলীর ঐতিহ্যবাহী ইছানগর খালটি বেদখল করে নিলো সিন্ডিকেটরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইছানগর খাল দখল করে নির্মিত কারখানা সরিয়ে নিয়ে খালটি পুনঃরায় খনন করে দিতে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স, সি রিসোর্স কোম্পানি ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি—বেলা কর্তৃক উকিল নোটিশ দেয়ার দুই বছর অতিবাহিত হয়েছে। অথচ খালের দখলকৃত অংশ উদ্ধারে কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। কর্ণফুলী নদীর একমাত্র প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় হিসাবে খালটি যুগ যুগ ধরে ইছানগর বাংলাবাজার ও অভয়মিত্র ঘাটের সাম্পান মাঝিদের দূর্যোগে সাম্পান নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। খালটি উদ্ধারে একাধিক বার মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে যানা যায়, কর্ণফুলী নদীর শাখা ঐতিহ্যবাহী ইছানগর খাল আরএস ও বিএস সিটে চিহ্নিত জোয়ারভাটার খাল। যা বিএফডিসি ও কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছে। যার কারণে খাল দিয়ে এখন আর মাঝিরা নৌকা চালাতে পারছে না। দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড়ে মাঝিরা খালটিকে পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করে। বৃহত্তর ইছানগর এলাকার পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হতো। এছাড়া কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স তাদের বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলে পানি দূষণ করছে। ।
২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন, ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ও ইছানগর বাংলাবাজার সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি নামের পাঁচটি সংগঠন মানববন্ধন করে খালটি উদ্ধারের দাবী জানানোর পর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার পক্ষ থেকে দখলকারীদের উকিল নোটিশ প্রদান করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবির স্বাক্ষরিত উক্ত নোটিশে বলা হয়,চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর খালটি ১নং খতিয়ানের বিএস ইছানগর মৌজার ১৫০৯,১৫১১,১৫১৪ ও ১১১৬ দাগাদির মধ্যে প্রবাহিত ছিল। কর্ণফুলী নদীর এই শাখা খালটি ইছানগর এলাকার পানি প্রবাহের একমাত্র অবলম্বন ছিল। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা সাগর উত্তাল হলে উক্ত খালকে সাম্পান মাঝিরা বংশ পরম্পরায় পোতাশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু উল্লেখিত তিন প্রতিষ্ঠান দেশের আইনের তোয়াক্কা না করে জোয়ার—ভাটার স্রোতধারা প্রবাহমান থাকা খালটি ভরাট করে সেখানে কারখানা ও ভবন তৈরি করেছে। যা দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নোটিশে আরো উল্লেখ করা হয়— বেলার প্রতিনিধির পরিদর্শনে দেখা যায়, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স ১৫১৪ দাগের পুরো অংশ এবং ১৫১৩ দাগের অংশ দখল করে কারখানা তৈরি করেছে। সী রিসোর্স লি. ১৫১৩ দাগের ১৫ ফুট দখল করে কারখানা তৈরি করেছে। নোটিশে খালের ভরাট অংশ খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা দাবি জানানো হয়। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না দিলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নোটিশটি ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর,পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। উকিল নোটিশ দেয়ার দুই বছর অতিবাহীত হলেও এখনও খালটি উদ্ধারে দখলকারী বা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই বিষয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, আমরা উকিল নোটিশ দিয়ে তাদের অবহিত করেছি। একটি খালকে মেরে ফেলা হয়েছে। অথচ স্থানীয় প্রশাসন কিছুই করলো না।
আমরা নোটিশ দিয়ে জানানোর পরও তারা কিছুই করেনি। এখন আমরা এই বিষয়ে আদালতের দারস্থ হচ্ছি। কর্ণফুলী সুরক্ষা পরিষদ’র সভাপতি কামাল পারভেজ বলেন ইছানগর খালটি হলো কর্ণফুলী নদীর প্রাণ, যদি খালটি না থাকে তাহলে ইতিহাস ঐতিহ্য যেমনটি হারাবে তেমনি মাঝিমাল্লাদের সাম্পানের ঘাট ছিলো বলে তা প্রজন্মের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। প্রশাসনের নাকের ডগায় যে খালটি দখল হয়ে যাচ্ছে এবং প্রশাসনের নিরবতার কারনে একদিন এই প্রশাসনকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১