চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের কর্মকাণ্ডকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে টানা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড নিয়ে দিনভর চলে নানা নাটকীয়তা। এদিন দুপুর ১২টায় উপাচার্যের কক্ষে আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড (নিয়োগ বোর্ড) বাতিলের দাবিতে উপাচার্যকে চিঠি দেয় চবি শিক্ষক সমিতি।
এ সময় আলোচনার এক পর্যায়ে চবি উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উপাচার্য কক্ষ ছেড়ে কনফারেন্স রুমে চলে যান। উপাচার্যের সঙ্গে কোনো আলোচনা না হওয়ায় বেলা ২টায় নির্বাচন বোর্ড বাতিলের দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির অবস্থানের মুখে পড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টার দিকে চবি উপাচার্য ও উপ উপাচার্যসহ নির্বাচনী বের্ডের সদস্যরা উপাচার্য কার্যালয় ত্যাগ করে। অভিযোগ উঠেছে, অজ্ঞাত স্থানে নির্বাচনী বোর্ডের সভা বসে। এদিন দ্বিতীয় দফায় উপাচার্যের সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হয় শিক্ষক সমিতি। এদিন সন্ধ্যা ৬ টায় সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন চবি শিক্ষক সমিতি।
আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম আবু নোমান অভিযোগ করেন, নির্বাচনী বোর্ডের একজন সদস্য অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা একজন প্রার্থীকে গাড়িতে করে নিয়ে চলে যান। ফলে এই নির্বাচনী বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচনী বোর্ডের একজন সদস্য হয়ে কখনই এ ধরনের কাজ করতে পারেন না।
এই বিষয়ের সত্যতা জানতে নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক নির্মল কুমার সাহা এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোনো সাড়া মেলেনি।
চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, উপাচার্য ও তার পন্থির লোকেরা নিজে থেকে বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন নিজে থেকে বোর্ড বসাচ্ছেন। শিক্ষকগণ যখন উনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি সভাপতি মহোদয়ের সাথে অনেক রুঢ় আচরণ করেছেন। তিনি পরে আমাদের সাথে দেখা করার জন্য ছয় জনকে ডেকে নিয়েছেন। তিনি আমাদের এক ঘন্টা বসিয়ে রেখে এরপর তিনি বলেন উনাদের সাথে আমি কথা বলতে রাজি নই আমি অপমানিত বোধ করেছি। যেখানে তিনি নিজে অপমানিত করেছেন সেখানে তিনি অপমানিত বোধ করেছি বলে আর কোনো কথা বলেননি। যথারীতি সিলেকশন বোর্ডের সদস্যগণ কিছু প্রার্থীদের নিয়ে গোপনে প্রক্টরের গাড়িতে করে গোপনে একটি জায়গায় গিয়ে সিলেকশন বোর্ডের প্রক্রিয়াটি চলমান রেখেছেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, উপাচার্য উনার কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে চুপে চুপে বাংলোতে নিয়ে গেছেন।এরকম নজিরবিহীন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কখনও ঘটে নি। এই অবস্থায় আমরা উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি। এই দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা আগামীকাল সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। পরবর্তীতে আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, রোববার (১৭ ডিসেম্বর) চবি আইন বিভাগ ও আগামীকাল সোমবার বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড এর সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে দুই বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগ, পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে উপাচার্যের ‘বিশেষ ক্ষমতাবলে’ দেয়া হয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই মর্মে দুই বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এক প্রকার আপত্তির মুখেই এই দুই বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে নির্বাচন বোর্ড ডাকা হয়েছে। এটিকে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ এর লঙ্ঘন বলছে চবি শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকরা।
সম্প্রতি বাংলা বিভাগে ৭ জন ও আইন বিভাগে ২ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই মর্মে দুই বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি থেকে দেওয়া সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আপত্তির মুখে উপাচার্যের একক ক্ষমতাবলে এ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ এর লঙ্ঘন বলছে চবি শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা।
Discussion about this post