চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে এবারের বইমেলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ। বিগত সময়ে নিদিষ্ট একটা জায়গায় বইমেলার আয়োজন হতো, এবারে তা হচ্ছে না বলে প্রকাশকদের মাঝে একটা হতাশার মনোভাব দেখা যাচ্ছে। চসিক কতৃক তত্ত্বাবধানে এবারের বইমেলা ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শুরু হয়ে ২ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী।
গত ১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিসেবী, লেখক-কবি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের পেশাজীবীদের সাথে আসন্ন অমর একুশে বইমেলা আয়োজন নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বইমেলা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, এবারের বইমেলা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় সমৃদ্ধ আয়োজন হবে। মেলা শুরুর আগে মহানগরীতে অন্তত ৫ দিন মাইকিং করা হবে যাতে সকল নাগরিক বইমেলার কথা জানতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যানার ফ্যাষ্টুন লাগানো হবে। মেলাকে জমিয়ে তোলার জন্য প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আবৃত্তি, ছড়া পাঠ, নৃত্যের ঝঙ্কার তোলা হবে। চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রকাশকগণ ছাড়াও প্রতি বছরের ন্যায় ঢাকা থেকে দেশ সেরা প্রকাশনা সংস্থাদের চট্টগ্রামের বইমেলায় আমন্ত্রণ জানানো হবে। চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নব নির্বাচিত সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবুর দাবীর প্রেক্ষিতে এবারের বইমেলার সময়সূচি ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ নির্ধারণ করা হয়। বিগত চার বছরের ধারাবাহিকতায় মেলার স্থান চট্টগ্রাম এম.এ.আজিজ স্টেডিয়ামস্থ জিমনেসিয়াম চত্বরে এবার অনুষ্ঠিত হতে পারছে না। খেলার মাঠে যে কোনো ধরণের মেলা অনুষ্ঠানকে নিরুৎসাহিত করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বইমেলা অতি সম্প্রতি কাজীর দেউরি শিশু পার্কের পরিত্যক্ত স্থানে করার প্রস্তাবনায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে সায় প্রদান করেন পাশাপাশি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনের কথা জানিয়ে সবুজ পরিবেষ্টিত সিআরবির শীরিষ তলায় করার প্রস্তাবনাও উঠে আসে। ইতোমধ্যেই প্রকাশনা সমূহের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ফরম বিতরণ শরু হয়েছে। আগামী ২৯ তারিখের মধ্যে মেলায় অংশগ্রহণ করার শেষ দিন নির্ধারিত করা হয়েছে। মেলা শুরু হওয়ার দিনক্ষণ এগিয়ে এলেও শিশুপার্ক মাঠ নাকি সিআরবির শীরিষ তলা কোথায় এবারের অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন করা হলেও এখনও অনুমোদনের দেখা মেলেনি। এ নিয়ে চট্টগ্রামের লেখক, প্রকাশক, পাঠক, সংস্কৃতিসেবীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। এদিকে চট্টগ্রামের প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্ব করা নিয়ে একটি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রতিবারই চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা আয়োজক কমিটিতে চসিক মেয়রকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করে এবং চসিকের একজন জনপ্রতিনিধিকে আহবায়ক, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতিকে যুগ্ম আহবায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধি ও সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি বইমেলা আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এবারের বইমেলায় কি এক রহস্যময় কারণে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নব নির্বাচিত সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবুকে পাশ কাটিয়ে প্রকাশক পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য অন্য কারো নাম প্রস্তাব করার পাঁয়তারা চলছে জানতে পেরে চট্টগ্রামের প্রকাশকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের কথা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে অমর একুশে বইমেলা কমিটিতে গনতান্ত্রিকভাবে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতিকে যুগ্ম আহবায়ক করার বিধান প্রচলিত আছে। এই বিধানকে রহিত করার সুযোগ নেই। একমাত্র পরিষদের সভাপতিই প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্ব করার বৈধ প্রতিনিধি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বলাকার স্বত্বাধিকারী, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক জামাল উদ্দিন ও চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আবির প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী, বিশিষ্ট কবি মুহম্মদ নুরুল আবসার বলেন, চট্টগ্রামের প্রকাশকদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী বৈধ সংগঠন হলো চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ। দীর্ঘ চার দশকের ধারাবাহিকতায় আজ চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা একটি সমৃদ্ধ আয়োজনে রূপ নিয়েছে। যদিওবা চট্টগ্রামের প্রকাশক, লেখক, সংস্কৃতিসেবীদের নানা উদ্যোগে চট্টগ্রামের বইমেলা খণ্ডিত খণ্ডিত ভাবে আয়োজন করা হতো কিন্তু বিগত পাঁচ বছর যাবত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একক উদ্যোগে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহযোগিতায় বৃহত্তর পরিসরে চট্টগ্রাম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরের এই ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার এই বইমেলায় চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতিকে পদাধিকার বলে যুগ্ম আহবায়ক করার বিধান চালু আছে। এই বিধানকে রহিত করে প্রকাশক পরিষদের ভেতর গাপটি মেরে থাকা অশুভ শক্তির ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের অশুভ তৎপরতা প্রকাশক পরিষদ মেনে নিবে না। সাংগঠনিক ও গনতান্ত্রিকভাবে পরিষদের নির্বাচিত সভাপতিই চট্টগ্রামের প্রকাশকদের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি বলে তাঁরা মত প্রকাশ করে। সভাপতির নামের স্থলে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে অন্য কারো নাম মেনে নেয়া হবে না বলে প্রকাশকবৃন্দ মতামত ব্যক্ত করেন। অমর একুশে বইমেলা আয়োজক কমিটি গঠনের বিগত সময়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার বিষয়ে মাননীয় মেয়র মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ করার অশুভ পাঁয়তারা চলছে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের কর্মকর্তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিগত তিনটি বইমেলার সফল আহবায়ক সাবেক প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর ড. প্রফেসর নিছার উদ্দিন আহমেদ মন্জু’র মুঠো ফোনে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
বইমেলার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এর সহকারি একান্ত সচিব আশেকে রসুল টিপু বলেন বইমেলা এবার সিআরবি সিরিজতলায় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আরেকটি প্রশ্নের উত্তরের বলেন মেলার একটা আহ্বায়ক কমিটি হয় সেখানে সৃজনশীল প্রকাশক কমিটির সভাপতি যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে থাকেন এবং সাধারণ সম্পাদক সদস্য হিসেবে থাকেন। সৃজনশীল প্রকাশক কমিটি যেভাবে দিবেন সেভাবেই কমিটি করা হবে।
Discussion about this post