রেজি তথ্য

আজ: রবিবার, ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ৪ঠা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন তার প্রমাণ

মাহামুদুল হাসান নিজামী

রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনেক বাঙ্গালির অনেক বেশি আবেগ। তিনি দোষেগুনে মানুষ, কিন্তু তাঁকে অতিমানবীয় করে তোলায় আমার আপত্তি। তিনি পূর্ববাংলার জমিদারি দিয়েই জমিদার। পূর্ববাংলার চাষাভুষাদের ঘামে তাঁর অর্থবিত্ত। অথচ সেই পূর্ব বাংলার মানুষদের তিনি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন।

তাঁর দায়িত্ব ছিল এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নের জন্য কাজ করা। অথচ তিনি করেছেন উল্টোটা। তিনি শান্তি নিকেতন করেছেন পশ্চিম বাংলার বোলপুরে। যেটা করা উচিত ছিল কুষ্টিয়ায় বা শাজাদপুরে।

তিনি বঙ্গ ভঙ্গের বিরোধিতা করেছেন। অথচ এই বঙ্গভঙ্গই পূর্ব বঙ্গের মানুষের ভাগ্য ফেরানর মহিসোপান ছিল। তিনি – আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি লিখেছেন বঙ্গভঙ্গ রোধ করার জন্য। দুর্ভাগ্য সেটাই এখন আমাদের জাতীয় সঙ্গীত।

বলতে পারেন বঙ্গবন্ধুই তো এটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে চিনহিত করেছেন। হাঁ আমি বলব বঙ্গবন্ধুর ভুলের মধ্যে এটি একটি ভুল। তিনি হয়তো তখন আমাদের স্বাধীনতা উত্তর সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় এই ভুলটি করতে বাধ্য হয়েছেন। রবীন্দ্রপ্রেমী বুদ্ধিজীবীদের চাপও হয়তো ছিল।

রবীন্দ্র সাহিত্য অনেকের কাছে অমর। আবার আমার মত অনেকের কাছে অমর কিছুই নয়। বরং শতবর্ষী পুরনো সাহিত্য। শতবর্ষী গাছের নিচে নতুন গাছ জন্মায় না। রবীন্দ্রনাথ হলো শতবর্ষী গাছ। তিনি থাকলে নতুন গাছ জন্মাবে না। তাই রবীন্দ্রনাথের মত শতবর্ষী গাছকে উপড়ে ফেলা উচিত। তাতে সাহিত্যের নতুন দিগন্ত উম্মচিত হবে। এর মধ্যে বাংলা সাহিত্য অনেকদূর এগিয়েছে এবং সেটা আমাদের স্বাধীনতার কারণে।

আমরা পাকিস্তানের ইসলামি উম্মায় আটকে থাকলে স্বাধীনতা পেতাম না। বস্তুত পুরাতন ধ্যান ধারনাকে ঝেড়ে ফেলতে না পারলে সামনের দিকে এগুনো যায় না। এই সূত্রে আমি এবং আমার মত অনেকে রবীন্দ্র জড়তা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।

রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছেন। যে পূর্ব বাংলা তাঁকে ধনে ধান্যে ফুলে ফেঁপে তুলেছে সেই পূর্ব বাংলাকে তিনি অবহেলা করেছেন। তাদের উন্নয়নের প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন। আমি ও আমার মতে অনেকের কাছে তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন।

প্রমান নীচের মনিষীদের মন্তব্য

১. ড. নীরদ বরণ হাজরা
২. ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার
৩. শ্রী সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস,
৪. নীরদ চন্দ্র চৌধুরী
৫. সরকার শাহাবুদ্দীন আহমদ
৬. মোহাম্মদ আবদুল মান্নান

ড. নীরদ বরণ হাজরা,
❝ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ কলিকাতার গড়ের মাঠে এক বিরাট সমাবেশ করা হয়। তখন কবির বয়স ছিল ৫১ বছর। ঠিক তার দু’দিন পূর্বে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছিল। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, ঢাকায় ইউনিভার্সিটি হতে দেওয়া যাবে না। ঐ গুরুত্বপূর্ণ সভায় হিন্দু নেতারা উপস্থিত ছিল। নতুন রাজ্য পুনর্গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন কিনা? বা শিক্ষা বিষয়ে করণীয় কি?

আলোচনার জন্য এক জনপ্রতিনিধিত্বপূর্ণ সভা হয় কলকাতার টাউন হলে। উক্ত উভয় সভার সভাপতি ছিল রবীন্দ্রনাথ। ❞

ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার,
❝ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আশুতোষ মুখার্জীর নেতৃত্বে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জকে ১৮ বার স্মারকলিপি দিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিলো যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না হয়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিদ্রপ করে বলত মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়। ❞

শ্রী সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস,
❝ ১৯১২ সালের মার্চ মাসে কোলকাতার গড়ের মাঠে এক বিশাল মিটিং হয়। যারা কোনদিন কোন মিছিল, সমাবেশে যায় না তারাও গিয়ে মাঠ ভর্তি করে ফেলে। আমাদের মত এত ছোট মিটিং না, বিশাল ডায়াস, বিশাল মিটিং।

সেই মিটিং এর সভাপতি হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিসের জন্য সেই মিটিং জানেন? ইংরেজ গর্ভমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকায় একটা ইউনিভার্সিটি হবে তার বিরুদ্ধে। ওই মিটিংয়ে যার সভাপতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সিদ্ধান্ত হল ঢাকায় যেন ইংরেজ গর্ভমেন্ট ইউনিভার্সিটি না করে। কেন বলেন তো?

ঢাকায়, পূর্ব বাংলায় তো সব মুসলমানের বাস। মুসলমান লেখাপড়া শিখলে তো কায়েদ বর্ণের মর্যাদা থাকে না, মান থাকে না, সম্মান থাকে না। মুসলমানের ছেলে ডাক্তার আবার ব্রাহ্মণের ছেলেও ডাক্তার। এটা হলে কি ব্রাহ্মণের জাত-মান থাকে? থাকে না।

তাই রবীন্দ্রনাথের মত লোক, বিশ্বকবি তিনি তার প্রতিবাদ করলেন। আমি উনার কথা বেশি বলছি কারন তিনি আমাদের কাছে শ্রদ্ধেয়, অন্য কারনে শ্রদ্ধেয়।

তবে যখন আমরা এই বিষয়গুলো আলোচনা করি তখন সত্যিকারের ভেতরের ব্যাপারটা পরিস্কার বোঝা যায়। তারা কত বার বলেছিলো জানেন? এই বাবুরা? ১৮ বার স্মারকলিপি দিয়েছিলো যেন ঢাকাতে ইউনিভার্সিটি না হয়।

এই যে মানসিকতা, মুসলমানরা যেন লেখাপড়া না শিখতে পারে, তাদের আমরা নেতা বানাচ্ছি। ❞

নীরদ চন্দ্র চৌধুরী,
❝ ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। ❞
সরকার শাহাবুদ্দীন আহমদ,
❝ ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ তিনি ছিলেন জমিদার। তিনি মুসলমান প্রজাদের মনে করছেন লাইভ স্টক বা গৃহপালিত পশু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে নবশিক্ষিত মুসলমান সমাজকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের সন্তানদের শিক্ষিত হয়ে বুদ্ধিজীবী হলে চিরকাল সেবাদাস করে রাখা যাবে না।

একথা চিন্তা করেই হিন্দু বুদ্ধিজীবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরা সেদিন আতংকিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী হিন্দুরা কতটা ক্ষিপ্ত হয়েছিল এর প্রমাণ পাওয়া যাবে সেকালের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, বিবৃতি ও পত্রিকার ভাষ্য থেকে।

১৯১২ সালে ১৬ই ফেব্রুয়ারী বড় লাটের সাথে বর্ধমানের স্যার রাসবিহারী ঘােষের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিমন্ডলী সাক্ষাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করার পক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তির জাল বিস্তার করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে আভ্যন্তরীণ বঙ্গ বিভাগ-এর সমার্থক, তাছাড়া পূর্ববঙ্গের মুসলমান প্রধানত কৃষক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তারা কোন মতেই উপকৃত হবে না।

বিপিনচন্দ্র পাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অশিক্ষিত ও কৃষক বহুল পূর্ববঙ্গের শিক্ষাদান কর্মে ব্যাপৃত থাকতে হবে; পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের শিক্ষানীতি ও মেধার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকবে না। ❞

একই ধরনের তথ্য পাবেন “বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ” বইয়ের ২০১ পৃষ্ঠায়।
এর বাইরে আমার সরাসরি শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াৎ আনসারি ক্লাসে বহুবার ব্যাখ্যা করেছেন কেন রবীন্দ্রনাথের ঢাবি প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করাটাই ঠিক ছিল। স্যার রবীন্দ্রনাথের একদম গুনমুগ্ধ ভক্ত।

তিনি বলেছিলেন, ঢাবি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের জন্য। এই চিন্তাটা সাম্প্রদায়িক। বিদ্যাচর্চার উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।

তবে রবীন্দ্রনাথ এই গ্রাউন্ড থেকে বিরোধিতা করে নাই। এই কথা কেউ কোন দিন বলেও নাই। অতিভক্তি থেকে স্যার রবীন্দ্রনাথের অবস্থানের পক্ষে একটা সাফাই তৈরি করেছেন। রবীন্দ্রনাথের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে কঠিনভাবে জাত-পাত মেনে চলা হত।

কেউ কেউ দাবি করে সে সময়ে রবীন্দ্রনাথ মৌনব্রত অবলম্বন করেছিলেন৷ কোন কথা বলেন নাই। স্বাভাবিক যুক্তি জ্ঞান ব্যবহার করে অনুমান করা যায় এটা ভ্রান্ত দাবি। কোলকাতায় প্রবল ঢাবি বিরোধী সভা-সমাবেশ চলেছ, মাসের পর মাস।

কোলকাতার সুশীল সমাজ দিস্তার করে দিস্তা কাগজ নষ্ট করে প্রবন্ধ লিখছে একের পর এক, ইংরেজ সরকারকে স্মারকলিপি দিচ্ছে কয়েকদিন পর পর।

এই রকম একটা টালমাটাল অবস্থায় এইসব সুশীলদের প্রধান হোতা রবীন্দ্রনাথ চুপ ছিলেন? এটা রবীন্দ্রনাথের ক্যারেক্টারের সাথে যায়? এরা রবীন্দ্রনাথের জীবনী পড়েছে কোনদিন??

রেফারেন্স:
১। ড. নীরদ বরণ হাজরা, কলকাতা ইতিহাসের দিনলিপি, ২য় খণ্ড, ৪র্থ পর্ব।
২। ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার, জীবনের স্মৃতিদ্বীপে, আবুল আসাদের ১০০ বছরের রাজনীতি থেকে উদ্ধৃত, পৃ. ৭২
৩। শ্রী সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস, ভিডিও বক্তব্য, লিংক কমেন্টে
৪। সরকার শাহাবুদ্দীন আহমদ, ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র- নজরুল চরিত্র, পৃ: ২৩১
৫। আবদুল মান্নান “বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ”, ২০১
Mir Salman Samil

এতগুলু প্রমাণ থাকতে কেন কিছু চামচা জাতীয় ব্যক্তি রবিন্দ্রানাথের পক্ষে সাফাই গাইছেন? সাক্ষী ৬ জনের মধ্যে ৪ জনই হিন্দু।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on pinterest
Pinterest
Share on reddit
Reddit

Discussion about this post

এই সম্পর্কীত আরও সংবাদ পড়ুন

আজকের সর্বশেষ

ফেসবুকে আমরা

সংবাদ আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১